এক সপ্তাহব্যাপী রক্তক্ষয়ী সীমান্ত সংঘাতের পর অবশেষে যুদ্ধবিরতির পথে হাঁটল দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্র পাকিস্তান ও আফগানিস্তান। দোহায় অনুষ্ঠিত এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের মাধ্যমে এই সমঝোতা এসেছে, যার সফল মধ্যস্থতা করেছে কাতার ও তুরস্ক। রোববার (১৯ অক্টোবর) কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিকভাবে এই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করে।
এই জরুরি বৈঠকটির নেতৃত্ব দেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ এবং আফগান প্রতিরক্ষামন্ত্রী মুল্লা ইয়াকুব। উভয় পক্ষ এই বৈঠকে তাৎক্ষণিকভাবে সংঘাত বন্ধ করতে এবং শান্তি প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে পরবর্তী আলোচনা চালিয়ে যেতে সম্মত হয়েছে।
সম্প্রতি দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায় মূলত আফগান ভূখণ্ড ব্যবহার করে পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলার অভিযোগকে ঘিরে। বৈঠকে পাকিস্তান জোর দিয়ে বলে, তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) এবং বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)-এর মতো জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো আফগানিস্তানের মাটি ব্যবহার করে পাকিস্তানে হামলা চালাচ্ছে।
জবাবে, আফগানিস্তানের তালেবান সরকার তাদের প্রচলিত অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে জানায়, তাদের মাটি অন্য কোনো রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ সংঘাতে ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হবে না। তবে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে এই অঙ্গীকারের কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়।
এই সংঘাত এতটাই মারাত্মক আকার ধারণ করেছিল যে, গত দুই সপ্তাহে উভয় পক্ষের শতাধিক মানুষ নিহত ও আহত হন। পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যায় যখন টিটিপি'র আত্মঘাতী হামলায় সাত পাকিস্তানি সেনা প্রাণ হারায়। এর ফলে ৪৮ ঘণ্টার অস্থায়ী যুদ্ধবিরতিও ভেঙে পড়েছিল।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের বিশ্লেষণ, এই যুদ্ধবিরতি সাময়িক স্বস্তি আনলেও, দুই দেশের সম্পর্ক মূলত নির্ভর করছে আফগানিস্তান তাদের মাটি থেকে টিটিপি-সহ অন্যান্য জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর তৎপরতা কতটা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে তার ওপর। পারস্পরিক আস্থা প্রতিষ্ঠা এবং সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ ছাড়া এই অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি স্থাপন করা কঠিন। কাতার ও তুরস্কের উদ্যোগকে আঞ্চলিক শান্তি প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
শান্তি টিকিয়ে রাখতে হলে শুধু যুদ্ধবিরতিই যথেষ্ট নয়; সন্ত্রাসবাদের শেকড় উপড়ে ফেলতে দুই দেশের মধ্যে নিশ্ছিদ্র নজরদারি ও সহযোগিতার প্রয়োজন।
