নিবন্ধনপ্রাপ্ত রাজনৈতিক দল হিসেবে আনুষ্ঠানিক যাত্রার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) প্রতীক নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে তীব্র টানাপোড়েনে জড়িয়েছে। আজ রোববার (১৯ অক্টোবর) প্রতীক পছন্দ করে জানিয়ে দেওয়ার শেষ দিন হলেও, দলটি এখনো তাদের একমাত্র দাবি ‘শাপলা’ প্রতীকেই অনড় রয়েছে।
ইসির পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, রাজনৈতিক দলের জন্য নির্ধারিত প্রতীক তালিকায় শাপলা প্রতীক না থাকায় সেটি কোনোভাবেই এনসিপিকে বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব নয়। কমিশন এনসিপিকে নির্দেশ দিয়েছে তালিকাভুক্ত প্রতীকগুলোর মধ্য থেকে যেকোনো একটি বেছে নিতে। অন্যথায় কমিশন নিজ সিদ্ধান্তে প্রতীক বরাদ্দ দেবে বলে চূড়ান্ত সতর্কবার্তা দিয়েছে।
এনসিপির পক্ষ থেকে শাপলার দাবি প্রথমে তোলা হয় গত জুনে নিবন্ধনের আবেদনের সময়। প্রাথমিকভাবে ‘কলম’ ও ‘মোবাইল ফোন’ প্রতীক চাইলেও পরে দলটি শুধুমাত্র ‘শাপলা’ প্রতীকেই নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে। সর্বশেষ ৭ অক্টোবর নির্বাচন কমিশনে শাপলার সাতটি নমুনাচিত্র পাঠিয়ে আবারো আবেদন জানায় এনসিপি। তবে নির্বাচন কমিশন সেই আবেদন নাকচ করে দেয়।
কমিশনের এই সিদ্ধান্তকে ‘স্বেচ্ছাচারী’ আখ্যা দিয়ে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, “আইনি কোনো ব্যাখ্যা না দিয়ে কমিশন আমাদের ওপর প্রতীক চাপিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি কোনো সংস্থা বা দলের প্রভাবের ফল কি না, সেটি এখন খতিয়ে দেখা দরকার।”
তিনি আরও বলেন, “শাপলার অনেকগুলো নকশা আমরা জমা দিয়েছি। বিকল্প যা কিছু রয়েছে, তা আমরা শাপলার মধ্যেই খুঁজে নিতে চাই। অন্য প্রতীক আমাদের দেওয়া হলে আমরা তা গ্রহণ করবো না। এর আইনি ও রাজনৈতিক প্রতিকার আমরা নেবো।” এই কঠোর অবস্থান এনসিপি ও ইসির মধ্যকার সংঘাতকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
এর আগে নাগরিক ঐক্যও শাপলা প্রতীক চেয়ে ব্যর্থ হয়েছিল। তবে এনসিপি দাবি করছে, নাগরিক ঐক্য যথেষ্টভাবে লড়াই করেনি, ফলে শাপলার দাবি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। আখতার হোসেন বলেন, “নাগরিক ঐক্য শুধু দাবি তুলেছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারেনি। এনসিপি সেই লড়াই করে যাচ্ছে।”
নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব মো. আখতারুজ্জামান এর আগে জানিয়েছেন, “নির্বাচনী বিধিমালায় শাপলা প্রতীক নেই। রোববারের মধ্যে তালিকাভুক্ত প্রতীক বেছে না নিলে কমিশন নিজ বিবেচনায় প্রতীক বরাদ্দ দেবে।” সময়সীমা শেষ হওয়ায় এখন ইসির পরবর্তী সিদ্ধান্তের ওপর এনসিপির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে।
এনসিপি'র অনমনীয় অবস্থান এবং ইসির কঠোর সতর্কবার্তার মুখে প্রতীক বরাদ্দ নিয়ে সৃষ্ট এই জটিলতা দেশের নির্বাচন পূর্ববর্তী রাজনৈতিক বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
