রাজনীতি

সরকার পতনের ১৪ মাস পরও বহাল ৩৩ আ.লীগ ইউপি চেয়ারম্যান: নেপথ্যে সুবিধাভোগী অংশ ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগ

সরকার পতনের ১৪ মাস পরও বহাল ৩৩ আ.লীগ ইউপি চেয়ারম্যান: নেপথ্যে সুবিধাভোগী অংশ ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগ

আওয়ামী লীগ সরকারের পট পরিবর্তনের এক বছরেরও বেশি সময় পরও কুমিল্লা জেলার ৩৩ জন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বহাল তবিয়তে দায়িত্ব পালন করছেন। সরকারের পতনের দীর্ঘ ১৪ মাস পরও আওয়ামী সমর্থিত এসব চেয়ারম্যানরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, যা নিয়ে স্থানীয় রাজনীতিতে চলছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা।

অভিযোগ উঠেছে, তাদের বহাল থাকার নেপথ্যে রয়েছে একটি প্রভাবশালী চক্র। একটি রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী অংশ ও ছাত্র সমন্বয়কদের একটি সুবিধাবাদী অংশ অনৈতিক সুবিধা নিয়ে তাদেরকে নিরাপদে দায়িত্ব পালনের সুযোগ করে দিচ্ছে বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে।

ষড়যন্ত্রের অভিযোগ: এই সুযোগে আওয়ামী লীগ সমর্থিত এসব জনপ্রতিনিধিরা নিয়মিতভাবে পালিয়ে থাকা দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন। তথ্য অনুযায়ী, তারা শেখ হাসিনাকে আবারও দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য গোপনে ষড়যন্ত্র করছেন এবং প্রতিটি এলাকায় নেতাকর্মীদের সংগঠিত করার কাজ করছেন।

সুবিধাভোগী চেয়ারম্যানদের তালিকা: কুমিল্লা জেলার বুড়িচং-৮, লালমাই-৮, ব্রাহ্মণপাড়া-৫, নাঙ্গলকোট-৪, বরুড়া-৭ এবং সদর দক্ষিণ উপজেলার চেয়ারম্যানরা এই তালিকায় রয়েছেন।

লালমাই উপজেলার ৮ চেয়ারম্যান: বাগমারা উত্তর ইউপির আবুল কাসেম, বাগমারা দক্ষিণ ইউপির লোকমান, বেলঘর উত্তর ইউপির আব্দুল মালেক, বেলঘর দক্ষিণ ইউপির গাজী, ভোলাইন উত্তর ইউপির এমরান কবির, ভোলাইন দক্ষিণ ইউপির মুজিবুর রহমান, পেরুল উত্তর ইউপির আনোয়ার হোসেন দুলাল এবং পেরুল দক্ষিণ ইউপির খন্দকার সাইফুদ্দিন।

বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া আসনের চেয়ারম্যানরা: বুড়িচং উপজেলার মোকাম ইউপির সাহেব আলী, ময়নামতির লালন হায়দার, ভারেল্লা উত্তর ইউপির ইস্কান্দর আলী, ভারেল্লা দক্ষিণ ইউপির ওমর ফারুক, রাজাপুর ইউপির আব্দুল করিম, পীর যাত্রাপুর ইউপির হাজী আবু তাহের, বাকশীমুল ইউপির আবুল কাসেম, ষোলনল ইউপির হাজী বিল্লাল। ব্রাহ্মণপাড়ার জহিরুল হক, শিদলাই ইউপির সাইফুল ইসলাম, মাধবপুর ইউপির ফরিদ উদ্দিন, সাহেবাবাদ ইউপির ভিপি মনিরুল বিল্লাল এবং শশীদল ইউপির আতিকুর রহমান।

নাঙ্গলকোটের চার ইউপির চেয়ারম্যান: সাতবাড়িয়া ইউপির শেখ কবির টুটুল, বক্সগঞ্জের আব্দুর রশিদ, রায়কোট উত্তরের মাস্টার রফিকুল ইসলাম ও বাঙ্গড্ডার সাইফুল ইসলাম।

বরুড়ার চেয়ারম্যানরা: গালিমপুর ইউপির বাচ্চু মিয়া (স্বতন্ত্র), ভবানীপুর ইউপির খলিল, আদ্রা ইউপির লিমন (স্বতন্ত্র), ভাউকসার ইউপির মাসুদ, চিতড্ডা ইউপির জাকারিয়া, পয়েলগাছা ইউপির মইন উদ্দীন ও খোশবাস দক্ষিণ ইউপির আব্দুর রব।

সদর দক্ষিণ উপজেলার চৌয়ারা ইউপির সোহাগও এখনো বহাল তবিয়তে দায়িত্ব পালন করছেন।

প্রশাসনের নীরবতা ও জনরোষ: সরেজমিনে পাওয়া খবরে জানা যায়, বিগত স্বৈরাচার সরকারের সময় কুমিল্লার প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নে বিরোধী মতের কোনো রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ছিল না। হামলা-মামলা, জমি দখল, চাঁদাবাজিসহ সর্বক্ষেত্রেই এই চেয়ারম্যানদের অবাধ বিচরণ ছিল। ২৪ সালের ৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের পর সাধারণ মানুষ তাদের গ্রেপ্তার ও বিচারের অপেক্ষায় ছিল। এর বিপরীতে, বিএনপির প্রভাবশালী অংশ ও ছাত্র সমন্বয়কদের একাংশের সুবিধা নিয়ে তারা প্রকাশ্যে ঘোরার সুযোগ পাচ্ছেন।

অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরপরই জনরোষের মুখে লাকসাম, মনোহরগঞ্জ সদর দক্ষিণ, কুমিল্লা সদর উপজেলার প্রায় সব ইউপি চেয়ারম্যানরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল।


ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পরও দুর্নীতি ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগ থাকা এসব চেয়ারম্যানদের বহাল থাকা স্থানীয় সুশাসনের প্রশ্নে একটি বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।