আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনী প্রতীক নিয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মধ্যে তীব্র মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে। এনসিপি দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, তাদের নির্বাচনী মার্কা ‘শাপলাই’ হবে। রোববার (১৯ অক্টোবর) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এই বার্তা দেন।
ফেসবুক পোস্টে হাসনাত আব্দুল্লাহ লেখেন, “শাপলাই হবে এনসিপির নির্বাচনী মার্কা।” তার এই ঘোষণার মাধ্যমে দলটির প্রতীক নিয়ে দৃঢ় অবস্থানের কথাই পরিষ্কার হলো।
অন্যদিকে, এনসিপিকে খাট, বেগুনসহ ৫০টি প্রতীকের মধ্যে একটি বেছে নিতে বলেছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু শাপলার দাবিতে অনড় রয়েছে দলটি। রোববার নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাতে এনসিপির প্রতিনিধি দল তাদের এই অনড় বার্তা দেয়।
হাসনাত আব্দুল্লাহ ইসির প্রস্তাবিত প্রতীকগুলো সম্পর্কে বলেন, “শাপলার বিকল্প কোনো অপশন নেই।” তিনি ইসির প্রতীক বরাদ্দের নীতিমালার স্বচ্ছতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছেন। তার মতে, বর্তমানে ইসির শিডিউলে অন্তর্ভুক্ত মার্কাগুলো কোন নীতিমালার ভিত্তিতে স্থান পেয়েছে, এবং শাপলাকে কেন সেই শিডিউলে অন্তর্ভুক্ত করা হবে না—উভয় ক্ষেত্রেই কোনো স্পষ্ট নীতিমালা নেই। এমনকি, বাংলাদেশে বিদ্যমান ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলগুলোকে দেওয়া প্রতীকগুলোর ক্ষেত্রেও স্পষ্ট নীতিমালার অভাব রয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
নির্বাচন কমিশনের আচার-আচরণে ‘মধ্যযুগীয় বর্বর শাসনব্যবস্থার’ সঙ্গে সাদৃশ্য দেখছেন এনসিপির এই নেতা। তিনি বলেন, “মধ্যযুগীয় বর্বর শাসনব্যবস্থায় আমরা দেখতাম, যেখানে রাজা যেভাবে ইচ্ছা সেভাবেই আইন প্রণয়ন করে। নির্বাচন কমিশনের আচার-আচরণে আমরা এ ধরনের মধ্যযুগীয় রাজাবাদশাদের আচরণের সঙ্গে তাদের একটা সাদৃশ্য রয়েছে।”
এনসিপির নেতাদের কাছে ইসির এই সিদ্ধান্তগুলো চাপিয়ে দেওয়া বলে মনে হচ্ছে। হাসনাত আব্দুল্লাহ দাবি করেন, নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের রিমোট কন্ট্রোল আগারগাঁওয়ে নেই, বরং এটি অন্য কোনো জায়গা থেকে পরিচালিত হয়। তিনি মনে করেন, ইসি কর্মকর্তারা নিজেরা এই সিদ্ধান্ত নেন না, বরং তারা সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন।
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ স্পষ্ট করে বলেন, “ইসি আমাদের খাট, বেগুনসহ ৫০ প্রতীকের মধ্যে থেকে বেছে নিতে বলেছে। আমরা এখান থেকে প্রতীক নেব না।” তার এই বক্তব্য এনসিপির অনড় অবস্থানকে আরও জোরালো করেছে।
এনসিপির এই কঠোর অবস্থান এবং ইসির বিরুদ্ধে প্রতীক বরাদ্দে স্বৈরাচারী আচরণের অভিযোগ দেশের নির্বাচন পূর্ববর্তী রাজনৈতিক বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
