সিলেট-৩ সংসদীয় আসনে (দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ) এবার ভোটের সমীকরণ ঐতিহ্যের পথ থেকে সরে এসে নতুন দিকে মোড় নিচ্ছে। এই আসনে বিএনপি’র হেভিওয়েট প্রার্থীদের মধ্যে মনোনয়নযুদ্ধ এখন চরমে। কিন্তু তাদের এই অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে কাজে লাগিয়ে ভোটের মাঠে শক্ত অবস্থান তৈরি করছে ইসলামী ঘরানার দলগুলো, যাদের নেতৃত্বে রয়েছে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ।
দীর্ঘদিনের বিভেদ কাটিয়ে ইসলামী দলগুলোর পক্ষ থেকে আলহাজ্ব মাওলানা নজরুল ইসলামকে একক প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি জমিয়তের কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক সম্পাদক এবং সিলেট জেলা হেফাজতের সাংগঠনিক সম্পাদক। দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জের কওমি ও হেফাজত ঘরানার বিশাল ভোটব্যাংক তার পক্ষে সক্রিয়ভাবে সংগঠিত হচ্ছে।
মাওলানা নজরুল ইসলামের পারিবারিক ও সামাজিক গ্রহণযোগ্যতাও অনেক বেশি। তিনি খলীফায়ে মাদানী আল্লামা বদরুল আলম শায়খে রেঙ্গা রাহ.-এর নাতিন জামাই এবং জামেয়া রেঙ্গা পরিবারের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত। তার পক্ষে জামেয়া রেঙ্গা ও তৎকালীন জমিয়তের প্রার্থী গহরপুরী রাহ. প্রতিষ্ঠিত জামেয়া গহরপুরসহ তিন উপজেলার কওমি মাদরাসা ও ধর্মভিত্তিক সংগঠনগুলোর সমর্থকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এই সংগঠিত শক্তি বিএনপি’র জন্য বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।
বিএনপি’র মনোনয়নযুদ্ধের চিত্র:
ঐতিহ্যগতভাবে আসনটি বিএনপি’র জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও, এখানে ছয়জন প্রভাবশালী নেতা মনোনয়নপ্রত্যাশী। যুক্তরাজ্য বিএনপি সভাপতি এম. এ. মালিক, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার এম. এ. সালাম, জেলা বিএনপি সভাপতি আব্দুল কাইয়ূম চৌধুরী এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আব্দুল আহাদ খান জামাল—এই চারজনই শক্তিশালী অবস্থানে আছেন। এর মধ্যে মালিক দীর্ঘদিনের আন্দোলন শেষে দেশে ফিরেছেন, সালামের রয়েছে তৃণমূলের ব্যাপক সমর্থন এবং কাইয়ূম চৌধুরীর সাংগঠনিক প্রভাব প্রশ্নাতীত।
নেতাকর্মীরা বলছেন, যদি বিএনপি দ্রুত একক প্রার্থী ঘোষণা করতে না পারে এবং অভ্যন্তরীণ কোন্দল মিটিয়ে ঐক্যবদ্ধ হতে ব্যর্থ হয়, তবে এই সুযোগে ইসলামী দলের একক প্রার্থী মাওলানা নজরুল ইসলাম সহজেই জয়ী হয়ে যেতে পারেন।
এছাড়াও খেলাফত মজলিসের মো. দিলওয়ার হোসেন, জাতীয় নাগরিক পার্টির ব্যারিস্টার নুরুল হুদা জুনেদ, জামায়াতে ইসলামীর মাওলানা লোকমান আহমদ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মাওলানা লুৎফুর রহমান কাসেমী এবং ইসলামী আন্দোলনের মাওলানা রেজাউল হক চৌধুরী রাজুও নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রচারণা চালাচ্ছেন, যা মূলত বিএনপি ও ইসলামী দলগুলোর ভোটের ওপরই প্রভাব ফেলবে।
সব মিলিয়ে সিলেট-৩ আসনে বিএনপি’র মনোনয়ন দ্বন্দ্বে আসন হারানোর শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। অন্যদিকে, ইসলামী দলগুলোর সংগঠিত ঐক্য একটি শক্তিশালী বিকল্প হিসেবে আবির্ভূত হওয়ায় আসনটির ভোটের ফল এবার যেকোনো দিকেই যেতে পারে।
