ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার সংগ্রাম, দীর্ঘ বন্দিজীবন এবং ব্যক্তিগত ভালোবাসার এক অভূতপূর্ব গল্প জন্ম নিলো মিশরের কায়রোতে। সম্প্রতি গাজায় যুদ্ধবিরতির ফলস্বরূপ মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনিদের মধ্যে আকরাম আবু বকর নামের এক বন্দির জীবনকাহিনি এখন ফিলিস্তিনি জনগণের মুখে মুখে। তিনটি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড মাথায় নিয়ে দীর্ঘদিন বন্দি থাকার পর তিনি মুক্তি পেয়েছেন।
তবে আকরাম আবু বকরের মুক্তি কেবল বন্দিত্ব থেকে মুক্তি নয়, এটি তার ২৩ বছরের অপেক্ষার অবসান। বহু বছর আগে, তিনি নিজেই তার স্ত্রীকে তালাক দিয়েছিলেন। কারণ ছিল তার স্ত্রীর প্রতি গভীর ভালোবাসা। তিনি জানতেন যে তার দীর্ঘ বন্দিজীবন তার স্ত্রীকে আজীবন একজন কারাবন্দির সহধর্মিণী হিসেবে মানসিকভাবে কষ্ট দেবে, তাই তিনি তাকে এই কষ্ট থেকে মুক্তি দিতে চেয়েছিলেন।
কিন্তু সেই নারী তার স্বামীর এই তালাককে মানতে পারেননি। অবিচল বিশ্বাস, ধৈর্য এবং গভীর ভালোবাসা নিয়ে জীবনের ২৩টি বছর কাটিয়ে দিয়েছেন আকরাম আবু বকরের ফিরে আসার আশায়। এই ত্যাগ ও ভালোবাসার বিরল দৃষ্টান্ত এক মানবিক মহাকাব্যের জন্ম দিয়েছে।
সম্প্রতি বন্দি বিনিময় চুক্তির আওতায় মুক্তি পাওয়ার পর ফিলিস্তিনের তুলকারামের বাসিন্দা আকরাম আবু বকর দখলদার ইসরাইলি কারাগার থেকে মিশরে নির্বাসিত হন। ৫০ বছর বয়সী এই ব্যক্তি কায়রোতে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই তার বিশ্বস্ত স্ত্রীর দেখা পান, যিনি তাকে স্বাগত জানাতে সেখানে গিয়েছিলেন।
এই অনুপম পুনর্মিলনের মুহূর্তটিকে স্মরণীয় করে রাখতে আকরাম আবু বকর তাৎক্ষণিকভাবে সিদ্ধান্ত নেন যে তিনি তার স্ত্রীকে পুনরায় বিয়ে করবেন। কায়রোতে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তাদের পুনরায় বিয়ে সম্পন্ন হয়।
আকরাম আবু বকরের এই ব্যক্তিগত বিজয়ের গল্পটি এমন এক সময়ে এসেছে, যখন প্রায় ২৫০ জন ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তি পেয়েছেন। এই ঘটনা ফিলিস্তিনিদের কাছে কেবল ব্যক্তিগত আবেগ নয়, বরং অদম্য আশা, ধৈর্য এবং ন্যায়ের বিজয়ের এক প্রতীকী উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই দম্পতির পুনর্মিলন বিশ্বজুড়ে ফিলিস্তিনিদের হৃদয়ে নতুন করে ভালোবাসার এবং বিজয়ের স্পন্দন জাগিয়েছে।
