জাতীয়

২১৫ কোটি টাকার আইকনিক স্টেশন অকার্যকর; অভ্যন্তরীণ ব্যর্থতায় বিদেশিদের দ্বারস্থ রেলওয়ে

২১৫ কোটি টাকার আইকনিক স্টেশন অকার্যকর; অভ্যন্তরীণ ব্যর্থতায় বিদেশিদের দ্বারস্থ রেলওয়ে

বাংলাদেশের রেলওয়ে ব্যবস্থার এক যুগান্তকারী সংযোজন, ২১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত কক্সবাজার রেলস্টেশন এখন রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের এক ‘বোঝা’ হিসেবে দেখা দিয়েছে। দেশের প্রথম আন্তর্জাতিকমানের এই আইকনিক স্টেশনটি নির্মাণের প্রায় দুই বছর পরও এর পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি রেলওয়ে। এর ফলে অকার্যকর অবস্থায় পড়ে থাকা এই স্থাপনাটির পরিচালনার ভার এখন দেশি একক প্রতিষ্ঠানের ওপর ভরসা না রেখে বিদেশি কোনো প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হতে চলেছে।

গত বছরের ১ ডিসেম্বর থেকে ঢাকা-কক্সবাজার রুটে ‘পর্যটক’ ও ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ নামে দুটি ট্রেন চলাচল শুরু হলেও, এই অত্যাধুনিক স্টেশনের মূল বাণিজ্যিক সুবিধাগুলো এখনো তালাবদ্ধ। রেলওয়ে সূত্র বলছে, আন্তর্জাতিকমানের এই স্টেশনটির ইউটিলিটি এবং অন্যান্য রক্ষণাবেক্ষণ খরচ এত বেশি যে, পূর্ণাঙ্গ চালু হলে প্রতি মাসে ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা খরচ হতে পারে, যা রেলওয়ের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। এই উচ্চ ব্যয়ভার এড়াতেই তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে পরিচালনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

ছয়তলা ভবনের আলিশান অবকাঠামো, বাস্তবে শুধু নামমাত্র

আধুনিক নকশায় নির্মিত ছয়তলা এই স্টেশন ভবনটি কাচঘেরা আলিশান কাঠামো এবং আইকনিক ছাদের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। কিন্তু সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এই আধুনিকতা শুধু অবকাঠামোতেই সীমাবদ্ধ। স্টেশনের পরিবেশ ছিল অন্ধকারাচ্ছন্ন, টিকিট কাউন্টার বা দিকনির্দেশনা অনুপস্থিত, চলন্ত সিঁড়িগুলো বন্ধ এবং যাত্রীদের ব্যবহারের জন্য টয়লেটটিও ছিল অনুপযোগী। কেবল টিকিটধারীরা ট্রেন ছাড়ার অল্প সময় আগে প্ল্যাটফর্মে প্রবেশের অনুমতি পান।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের নথি অনুযায়ী, এই ছয়তলা স্টেশন ভবনে নিচ তলায় এটিএম বুথ, ডাকঘর ও লাগেজ লকার থেকে শুরু করে উপরের তলাগুলোতে ১৭টি দোকান, ফুড কোর্ট, মাল্টিপারপাস হল, ২৯টি স্ট্যান্ডার্ড ও ডিলাক্স হোটেল রুম এবং বাণিজ্যিক স্পেস থাকার কথা ছিল। কিন্তু এসব সুবিধার বাস্তব উপস্থিতি বা কার্যক্রমের কোনো চিহ্ন নেই, ফলে ২১৫ কোটি টাকার বিশাল বিনিয়োগ কার্যত অচল হয়ে পড়েছে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন নিশ্চিত করেছেন, তারা এখন আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাদের লক্ষ্য হলো, পাঁচতারকা হোটেল পরিচালনার অভিজ্ঞতা আছে—এমন ‘দক্ষ ও অভিজ্ঞ বিদেশি প্রতিষ্ঠান’ এই পরিচালনার দায়িত্ব নিক। তবে দেশীয় প্রতিষ্ঠান বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে (জয়েন্ট ভেঞ্চার) কাজ করতে পারবে।

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান আক্ষেপ করে বলেন, সঠিক পরিকল্পনা ও পরিচালনার অভাবই এই অবচয়ের মূল কারণ। তার মতে, বিশাল বিনিয়োগের কোনো সুফল না মেলায় স্টেশনটি এখন 'বোঝা' হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে তার পরামর্শ, সবকিছুতে বিদেশিদের ওপর নির্ভর না করে দেশের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা জরুরি।