রাজনীতি

আ.লীগের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারসহ ১২ সুপারিশে প্রধান উপদেষ্টাকে ৬ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার খোলাচিঠি

আ.লীগের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারসহ ১২ সুপারিশে প্রধান উপদেষ্টাকে ৬ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার খোলাচিঠি

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে শক্তিশালী মানবাধিকার সুরক্ষা ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান নির্মাণে আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি যৌথভাবে খোলাচিঠি দিয়েছে ৬টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এই চিঠিতে আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারসহ মোট ১২টি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ আমলে নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

চিঠিতে স্বাক্ষরকারী সংস্থাগুলো হলো— হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, সিভিকাস, কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস, ফর্টিফাই রাইটস, রবার্চ এফ. কেনেডি হিউম্যান রাইটস এবং টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউট। তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক মৌলিক স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং আইন সংস্কারের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের প্রশংসা জানিয়েছে।

১২ দফা সুপারিশ: মূল লক্ষ্য জবাবদিহিতা ও সংস্কার

সংস্থাগুলো তাদের ১২ দফা সুপারিশের মাধ্যমে বাংলাদেশে মানবাধিকার সুরক্ষার বিস্তৃত ক্ষেত্রগুলোতে সংস্কারের দাবি তুলেছে:

১. আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার: সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় আওয়ামী লীগের কার্যক্রমে দেওয়া সামগ্রিক নিষেধাজ্ঞা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। সংস্থাগুলোর মতে, বহুদলীয় রাজনীতির স্বার্থে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা থেকে বিরত থাকা জরুরি। ২. নিরাপত্তা খাতে সংস্কার: র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) বিলুপ্ত করা এবং সেনা গোয়েন্দা সংস্থা (ডিজিএফআই)-এর ক্ষমতা সামরিক কার্যক্রমের মধ্যে সীমিত করা জরুরি। ৩. জবাবদিহিতা ও বিচারের নিশ্চয়তা: জুলাই বিপ্লব এবং গত পনেরো বছরে সংঘটিত গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতনের দায়ীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে (আইসিটি) রাজনৈতিক বা প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয় নির্বিশেষে আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে ন্যায়বিচার করার ক্ষমতা দিতে হবে। ৪. গুমের অপরাধ নির্ধারণ ও তদন্ত কমিশন: আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী গুমকে অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করে ‘গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার অধ্যাদেশ’ অবিলম্বে পাস করতে হবে, তবে মৃত্যুদণ্ড বাদ দিয়ে। গুম তদন্ত কমিশনকে শক্তিশালী করতে হবে। ৫. রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা প্রত্যাহার: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আগস্ট ২০২৪-এর আগে ও পরে দায়ের হওয়া সব রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা পর্যালোচনা করে বাতিল করতে হবে। ৬. ব্যক্তির স্বাধীনতা রক্ষায় আইন সংস্কার: ২০২৫ সালের ‘সাইবার সিকিউরিটি অধ্যাদেশ’সহ অন্যান্য দমনমূলক আইন যেমন সন্ত্রাসবিরোধী আইন ও অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মান অনুযায়ী বাতিল বা সংশোধন করতে হবে।

আইসিসি সহযোগিতা ও রোহিঙ্গা সুরক্ষা

এছাড়া, চিঠিতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে। সংস্থাগুলো স্পষ্ট করেছে, বর্তমানে মিয়ানমারে নিরাপদ প্রত্যাবাসনের পরিবেশ নেই, তাই শরণার্থীদের জোরপূর্বক ফেরত পাঠানো বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) সঙ্গে বাংলাদেশ-মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে চলমান তদন্তে পূর্ণ সহযোগিতা করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

সংস্থাগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, নিরাপত্তা খাতে এখনও কাঠামোগতভাবে সংস্কার হয়নি এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেক সদস্য এখনও জবাবদিহিতা প্রক্রিয়ায় সম্পূর্ণ সহযোগিতা করছে না। তাই শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে স্বাধীন ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য সরকারকে আহ্বান জানানো হয়েছে।