কুমিল্লার দেবিদ্বারে এক অমানবিক ও চাঞ্চল্যকর ঘটনায় কুদ্দুস মিয়া (৪৫) নামের এক কবিরাজের বিরুদ্ধে ছোট বোনের ‘জিন ছাড়াতে’ আসা এক গৃহবধূকে ধর্ষণ এবং ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় সোমবার (২০ অক্টোবর) বিকেলে ভুক্তভোগী ওই গৃহবধূর মা বাদী হয়ে দেবিদ্বার থানায় ওই কবিরাজের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। দেবিদ্বার থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) মো. মাঈন উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অভিযুক্ত কবিরাজ কুদ্দুস মিয়া উপজেলার জাফরগঞ্জ ইউনিয়নের পিরোজপুর গ্রামের মৃত আব্দুল কাদের জিলানীর ছেলে। মামলার অভিযোগ অনুযায়ী, গত ৩০ জুন সকালে ওই গৃহবধূ তার ছোট বোনের চিকিৎসার জন্য কুদ্দুস কবিরাজের বাড়িতে যান।
অভিযোগে বলা হয়, চিকিৎসার একপর্যায়ে কবিরাজ নানা কৌশলে গৃহবধূকে নিজের বসতঘরের একটি নির্জন কক্ষে নিয়ে যান এবং সেখানে তাকে ধর্ষণ করেন। ধর্ষণের সময় কুদ্দুস মিয়া পুরো ঘটনার ভিডিও ধারণ করে রাখেন।
এই ভিডিওটিই পরে গৃহবধূর জন্য ভয়াবহ ব্ল্যাকমেইলের হাতিয়ার হয়ে ওঠে। ভিডিও ফাঁসের ভয় দেখিয়ে কবিরাজ ওই গৃহবধূর কাছ থেকে প্রথমে ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। শুধু তাই নয়, দীর্ঘ দিন ধরে ভয়ভীতি দেখিয়ে অভিযুক্ত একাধিকবার গৃহবধূর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেন বলেও মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
সম্প্রতি কুদ্দুস মিয়া আবারও মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করলে গৃহবধূ তা দিতে অস্বীকার করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে অভিযুক্ত কবিরাজ তার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ভিডিও ও ছবি ছড়িয়ে দেয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সামাজিক সম্মান হারানোর ভয়াবহতা এবং বিচারের আশায় ভুক্তভোগী গৃহবধূর মা বাধ্য হয়ে দেবিদ্বার থানায় মামলা দায়ের করেন।
অন্যদিকে, অভিযুক্ত কবিরাজ কুদ্দুস মিয়া অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তাদের এক মেয়ে অসুস্থ ছিল এবং তার কাছে চিকিৎসা করিয়েছিল। তবে দুই মাস আগে তারা এই ধরনের অভিযোগ নিয়ে গ্রামে আসার সময় তিনি কক্সবাজারে ছিলেন এবং তার বিরুদ্ধে আনা ধর্ষণের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।
দেবিদ্বার থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ মঈন উদ্দিন বলেন, ভুক্তভোগীর মায়ের লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টি তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই ঘটনা সমাজে প্রচলিত অপচিকিৎসার আড়ালে লুকিয়ে থাকা অপরাধের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরল।
