রাজনীতি

দিনাজপুরে নাশকতার মামলা: জুলাইযোদ্ধার অভিযোগ আমলে নিল আদালত, পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার পর সিআইডি তদন্ত

দিনাজপুরে নাশকতার মামলা: জুলাইযোদ্ধার অভিযোগ আমলে নিল আদালত, পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার পর সিআইডি তদন্ত

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী ও বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক জুলাইযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃত মো. হায়াত আলী (৩১) সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১১৮ জনের বিরুদ্ধে দিনাজপুরের আদালতে নাশকতার মামলা দায়ের করেছেন। তার অভিযোগ, গত বছর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় সাবেক ক্ষমতাকেন্দ্রের নেতারা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালিয়েছিলেন। মামলায় অজ্ঞাত আসামি হিসেবে আরও ৪০০ জনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সোমবার দুপুরে দিনাজপুরের অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এই মামলা দায়েরের পর বিচারক মো. সামিউল ইসলাম সিআইডিকে আগামী ২৩ ডিসেম্বর প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলার বাদী হায়াত আলীর অভিযোগ, গত বছর ৪ আগস্ট দুপুর ২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত দিনাজপুর শহরে তৎকালীন হুইপ ইকবালুর রহিমের বাড়ি এবং আদালত এলাকা পর্যন্ত আন্দোলনকারীদের ওপর আসামিরা দেশি অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়, যা পুরো এলাকাকে রণক্ষেত্রে পরিণত করে। আসামিদের নির্বিচার হামলা ও গুলিবর্ষণের ফলে বাদীসহ বিপুল সংখ্যক ছাত্র-জনতা গুলিবিদ্ধ হয়। এই হামলায় গুরুতর আহত সদর উপজেলার রানীগঞ্জ এহিয়া কলেজের ছাত্র রবিউল ইসলাম রাহুল চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।

মামলায় অভিযুক্তদের তালিকায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও রয়েছেন— দিনাজপুর-৩ আসনের সাবেক এমপি ও সাবেক হুইপ ইকবালুর রহিম, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমদাদ সরকার, সাধারণ সম্পাদক মো. মমিনুল ইসলামসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতারা। মামলার সাক্ষী হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে ১৮ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত দিনাজপুর শহরে আহত জুলাইযোদ্ধাদের।

হায়াত আলী জানান, আহত হওয়ার পর তিনিসহ অন্যান্যরা চিকিৎসার জন্য সদর হাসপাতালে গেলে কর্তৃপক্ষ চিকিৎসা দিতে অবহেলা করে, ফলে অনেকে বাইরে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হন। তিনি নিজে দীর্ঘ সময় ধরে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন।

হায়াত আলী আরও দাবি করেন, তিনি এ ঘটনায় প্রথমে সদর কোতোয়ালী থানায় মামলা দাখিল করেছিলেন। কিন্তু থানা কর্তৃপক্ষ দীর্ঘ তিন মাস অতিবাহিত হলেও মামলাটি রেকর্ড করেনি, যার কারণে ন্যায়বিচার পাওয়ার শেষ ভরসা হিসেবে তিনি আদালতের শরণাপন্ন হতে বাধ্য হন। আদালত পুলিশের এই নিষ্ক্রিয়তার বিষয়টি আমলে নিয়ে মামলাটি সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। এই ঘটনা দেশে আইনি প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এবং আদালতের সক্রিয়তা সাধারণ মানুষের মধ্যে আশা জাগিয়েছে।