মুন্সিগঞ্জের টঙ্গীবাড়িতে হাইকোর্টে রিট থাকা সত্ত্বেও স্থানীয় প্রশাসন এক বৃদ্ধের ৮০ বছরের পৈতৃক বসতবাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। ভিটেমাটি হারিয়ে মানসিক চাপে গৃহকর্তা মো. আওলাদ হোসেন মাজি বর্তমানে সিসিইউ-তে মুমূর্ষু।
আইনের প্রতি চরম অশ্রদ্ধা এবং মানবিকতার চরম অবক্ষয়ের নজিরবিহীন ঘটনায় মুন্সিগঞ্জের টঙ্গীবাড়িতে এক বৃদ্ধের প্রায় ৮০ বছরের পৈতৃক বসতবাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, ওই বাড়ি উচ্ছেদের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী পরিবারের দায়ের করা একটি রিট পিটিশন (নং ১৬৬৯৩ অফ ২০২৫) হাইকোর্টে বিচারাধীন থাকা অবস্থাতেই এই ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়।
এই অমানবিক চাপ এবং ভিটেমাটি হারানোর মানসিক ধকল সইতে না পেরে গৃহকর্তা মো. আওলাদ হোসেন মাজি (৬৫) হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে ঢাকার একটি হাসপাতালের কার্ডিয়াক কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) মুমূর্ষু অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
নথিপত্র অনুযায়ী, ভুক্তভোগী মো. আওলাদ হোসেন মাজি তার পৈতৃক বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদের আশঙ্কায় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে রিট পিটিশন দাখিল করেছিলেন। গত ১৫.১০.২০২৫ তারিখে অ্যাডভোকেট ফারুক আলমগীর চৌধুরী স্বাক্ষরিত সার্টিফিকেট স্পষ্ট করে যে, উক্ত রিট বিচারাধীন ছিল এবং আবেদনকারীকে উচ্ছেদ না করার জন্য প্রতিপক্ষকে (যাদের মধ্যে মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসক, টঙ্গীবাড়ির ইউএনও এবং এসি ল্যান্ড অন্তর্ভুক্ত) নির্দেশনার আবেদন করা হয়েছিল।
কিন্তু এই আইনি প্রক্রিয়া চলমান থাকতেই, স্থানীয় প্রশাসন জবরদস্তিমূলকভাবে উচ্ছেদ অভিযান চালায়। পরিবারের ধারণ করা ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, একটি খননকারী যন্ত্র (excavator) দিয়ে আওলাদ মাঝির আধা-পাকা বাড়িটি সম্পূর্ণ ভেঙে মাটির সাথে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ভিটেমাটি হারানোর এই অমানবিক ধকল সইতে না পেরেই আওলাদ হোসেন মাজি হৃদরোগে আক্রান্ত হন। গত ১২ অক্টোবর, ২০২৫ তারিখে তাকে ঢাকার ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল ও কার্ডিয়াক সেন্টারে (মিরপুর) ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের রিপোর্ট অনুযায়ী, ৬৫ বছর বয়সী এই বৃদ্ধ 'Acute Coronary Syndrome (ACS)' এবং উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। পরিবারের শেয়ার করা ছবিতে দেখা যায়, জনাব মাজি হাসপাতালের সিসিইউ-তে (বেড-০৩) চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
আওলাদ মাঝির ছেলে সাক্ষাৎকারে বলেন, "আমাদের রিট করার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল আমাদের বাপ-দাদার ৮০ বছরের ভিটা রক্ষা করা। আমরা পার্ক নির্মাণের বিরুদ্ধে নই, কিন্তু মানবিক বিবেচনাটুকুও পেলাম না।"
এই ধ্বংসযজ্ঞের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর গত রাতে (১৯ অক্টোবর) পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়। ভুক্তভোগীর পরিবারের অভিযোগ, ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে এবং ধ্বংসযজ্ঞের প্রমাণ লুকাতে একটি চক্র রাতের আঁধারে ভাঙা বাড়ির চারপাশে দ্রুত টিনের বেড়া বা বাউন্ডারি নির্মাণের চেষ্টা চালায়।
পরিবারের ধারণ করা রাতের ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, একদল লোক অন্ধকারে কাজ করছে। এ সময় পরিবারের সদস্য ও স্থানীয়রা তাদের বাধা দিলে কর্মরত ব্যক্তিরা তাদের পরিচয়ের বিষয়ে কোনো স্পষ্ট উত্তর দিতে পারেননি। ভুক্তভোগী পরিবারের আশঙ্কা, সাংবাদিকরা যেন দিনের আলোতে এই বেআইনি ধ্বংসযজ্ঞের পূর্ণাঙ্গ চিত্র ধারণ করতে না পারে, সে উদ্দেশ্যেই প্রমাণ গোপনের জন্য এই তৎপরতা চালানো হচ্ছিল।
আইনজীবী এবং সচেতন মহলের প্রশ্ন— রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আদালতের দ্বারস্থ একজন নাগরিকের আবেদন বিচারাধীন থাকা সত্ত্বেও কে বা কাদের নির্দেশে এই আইন অমান্য করে একটি পরিবারকে আশ্রয়হীন করা হলো? ভুক্তভোগী আওলাদ মাঝির পরিবার এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং ন্যায়বিচার পেতে প্রধান উপদেষ্টার জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।