শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করা পতিত সরকারের সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের ৩০টি বিলাসবহুল গাড়ি ঘিরে নিলাম সিন্ডিকেটের কারসাজি এবং সরকারের নির্বাহী সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সেই গাড়িগুলো শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তাদের সেবায় হস্তান্তরের ঘটনা নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নিলামে বিক্রির পরিবর্তে গাড়িগুলো এখন সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরে (পরিবহন পুল) হস্তান্তর করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা এই গাড়িগুলো খালাস করার আগেই সংসদ ভেঙে যাওয়ায় আমদানিকারকরা তা ছাড় করতে পারেননি। বন্দর কর্তৃপক্ষ নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করে জায়গা খালি করতে উদ্যোগ নিলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস নিলাম বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করে। নিয়ম অনুযায়ী, জাপানে প্রস্তুত ২০২২ মডেলের এসব গাড়ির ভিত্তিমূল্য ৩ কোটি থেকে ১৬ কোটি টাকা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছিল।
তবে প্রথম নিলামে কাস্টমকেন্দ্রিক একটি নিলাম সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে ওঠে। সিন্ডিকেট করে ৮ থেকে ১৬ কোটি টাকার গাড়ির দাম তোলা হয় মাত্র এক থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত। নিলাম নীতিমালা অনুযায়ী, প্রথম নিলামে ভিত্তিমূল্যের নির্ধারিত দাম না উঠলে দ্বিতীয় নিলামের আয়োজন করার বিধান রয়েছে। কিন্তু নিলাম সিন্ডিকেটের এই কৌশল ধরে ফেলে সরকার। কারণ এই নিয়মে দ্বিতীয় নিলামে নামমাত্র সামান্য দাম বাড়লেই সিন্ডিকেট সেই গাড়ি পেয়ে যেত এবং কাস্টমস তা সরবরাহ করতে বাধ্য থাকত।
এই চালাকি এড়াতে সরকার দ্বিতীয় নিলামের আয়োজন না করেই বিলাসবহুল গাড়িগুলো নিজেদের অনুকূলে নিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে। এনবিআর জানিয়েছে, গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে এবং নিলামে ন্যায্য দাম না পাওয়ায় অর্থ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গাড়িগুলো সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম কাস্টম বিডার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব চৌধুরী সরকারের এই সিদ্ধান্তে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি দাবি করেন, নিয়ম রক্ষায় প্রথম নিলামে নামমাত্র দাম দেওয়া হয়েছিল; দ্বিতীয় নিলামে অবশ্যই ন্যায্য দাম উঠত। তিনি মনে করেন, নির্বাহী অর্ডারে গাড়িগুলো না নিয়ে সরকারের উচিত ছিল নিলামে অংশ নিয়ে কিনে নেওয়া, এতে নিয়মের ব্যত্যয় হতো না এবং বড় অঙ্কের রাজস্ব আয়ও হতো। রিকন্ডিশন গাড়ি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বারভিডার সাবেক সহসভাপতি গিয়াস উদ্দিন চৌধুরীও দ্রুত অন্যান্য আটকে থাকা গাড়ির নিষ্পত্তির দাবি জানান।
যেসব সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের গাড়ি এই চাঞ্চল্যকর চালানের সঙ্গে যুক্ত ছিল এবং সরকারের পতনের আগ মুহূর্তেও ছাড় করতে পারেননি, তাদের মধ্যে অন্যতম কয়েকজন হলেন—অভিনেত্রী তারানা হালিম, জান্নাত আরা হেনরী, আবদুল ওয়াহেদ, আবুল কালাম আজাদ, এস আল মামুন, মুজিবুর রহমান, এসএম কামাল হোসাইন, সুরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী, শাহ সারোয়ার কবির, এসএকে একরামুজ্জামান, সাজ্জাদুল হাসান, নাসের শাহরিয়ার জাহেদী, তৌহিদুজ্জামান এবং মুহাম্মদ সাদিক প্রমুখ।
