বিএনপি থেকে সদ্য পদত্যাগকারী নেতা অ্যাডভোকেট আবু আহমেদ ফয়জুল করিম মুবিন, যিনি কিশোরগঞ্জের সাবেক প্রতিমন্ত্রীপুত্র, প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগকে সমর্থন জানিয়ে এবং ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশে ফেরার কথা বলে স্থানীয় রাজনীতিতে বড় ধরনের আলোচনা সৃষ্টি করেছেন। বুধবার (২২ অক্টোবর) বিকেলে ফেসবুক লাইভে এসে ফয়জুল করিম মুবিন দৃঢ়তার সঙ্গে দাবি করেন, "মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এদেশে আসবেন কিংবা চলে এসেছেন।"
সাবেক এই বিএনপি নেতা তার বক্তব্যে শেখ হাসিনাকে 'পাগলের প্রলাপ বকার মতো মহিলা না' উল্লেখ করে তার ফিরে আসার বিষয়ে বিশ্বাস রাখতে সবাইকে অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, 'বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ব্যতীত, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি ব্যতীত এদেশে কোনো নির্বাচন হয়নি, ইতিপূর্বেও না।' তিনি তার এই বক্তব্যকে 'জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু' বলে শেষ করেন।
ফয়জুল করিম মুবিন দীর্ঘকাল কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। তিনি জেলা বিএনপির উপ-দপ্তর সম্পাদক এবং জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম কিশোরগঞ্জ শাখার যুগ্ম-আহ্বায়ক সহ একাধিক পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার বাবা মরহুম ফজলুল করিম ছিলেন কিশোরগঞ্জ সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী। স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে তার এই অবস্থান পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
এদিকে মুবিনের এই মন্তব্যের পর তার সাবেক দল বিএনপি থেকে কঠোর প্রতিক্রিয়া এসেছে। কিশোরগঞ্জ পৌর বিএনপির সভাপতি ও জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আশফাক জানান, যেহেতু তিনি সাবেক মন্ত্রী সন্তান, তাই তারা একটু সময় নিয়ে তাকে পর্যবেক্ষণ করছেন। তিনি মন্তব্য করেন, অনেক সময় মানুষের শারীরিক ও মানসিক সমস্যা থাকতে পারে এবং সমস্যা তেমন মনে হলে তাকে বহিষ্কার করা হবে।
প্রসঙ্গত, অ্যাডভোকেট ফয়জুল করিম মুবিন গত ৫ অক্টোবর ব্যক্তিগত কারণ উল্লেখ করে বিএনপি থেকে পদত্যাগ করার ঘোষণা দেন। পদত্যাগপত্রে তিনি উল্লেখ করেন যে, তার এই সিদ্ধান্ত কোনো নেতার চাপ বা বল প্রয়োগের ফল নয়। নিজের রাজনৈতিক অদূরদর্শিতা, সামাজিক প্রেক্ষাপট বোঝার দূরদৃষ্টির অভাব এবং সিনিয়র নেতাদের উপদেশ গ্রহণে ধৈর্যের অভাবকেই তিনি পদত্যাগের কারণ হিসেবে দেখান। পদত্যাগের চার দিনের মাথায় তিনি কিশোরগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের কৌসুলীর (এপিপি) পদ থেকেও সরে দাঁড়ান। এখন বিএনপি থেকে পদত্যাগের মাত্র কয়েক দিন পরেই তার আওয়ামী লীগকে সমর্থন জানানোর ঘটনা তার পদত্যাগের কারণ নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।
