মাদারীপুরে জেলা জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর সদস্য মেরাজুল ইসলামকে ঘিরে ব্যাপক কেলেঙ্কারি ও অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। সাবেক এই কিন্ডারগার্টেন শিক্ষক বর্তমানে এনসিপি সদস্য পদকে ব্যবহার করে অবৈধ বালু ব্যবসার সিন্ডিকেট পরিচালনা করছেন এবং তার বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারি, ব্ল্যাকমেইল ও মামলা বাণিজ্যের অসংখ্য অভিযোগ উঠেছে। ইতোমধ্যে তার অশ্লীল কথোপকথনের ভিডিও, কলরেকর্ড ও ছবি ফাঁস হওয়ায় এলাকায় তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।
মেরাজুল ইসলাম মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার শংকরদী গ্রামের বাসিন্দা। জানা গেছে, টাকা চুরি, নারীদের কুপ্রস্তাব এবং অনৈতিক সম্পর্কে জড়িত থাকার অপরাধে তাকে পরপর চারটি কিন্ডারগার্টেন স্কুল (থ্রি-ডি ডিজিটাল স্কুল, ইকরা স্কুল, কিডস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ও মডেল স্কুল) থেকে বহিষ্কার করা হয়। থ্রি-ডি ডিজিটাল স্কুলের পরিচালক আরিফুজ্জামান টিপু বেগ বহিষ্কারের কারণ হিসেবে স্কুলের টাকা চুরি ও নারী ঘটিত কেলেঙ্কারিকে উল্লেখ করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ভুক্তভোগী নারীও মেরাজুল শিক্ষক থাকাকালীন তার মোবাইল ফোনে রাতে কল করে কুপ্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ করেছেন।
৫ আগস্ট সরকার পতনের পর রাজনৈতিক সুযোগ বুঝে মেরাজুল জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপিতে যোগ দেন এবং মাদারীপুর জেলা সমন্বয় কমিটির সদস্য পদ বাগিয়ে নেন। এরপরই তিনি রাজৈর উপজেলার তাঁতিকান্দা, শংকরদী, হোসেনপুর ও পাইকপাড়াসহ বিভিন্ন নদীবেষ্টিত এলাকায় অবৈধ ড্রেজারের মাধ্যমে বালু উত্তোলনের সিন্ডিকেট পরিচালনা শুরু করেন। এই অবৈধ বালু বিক্রিতে বাধা দেওয়ায় তিনি হামলার ঘটনাও ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
তার বিরুদ্ধে সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগটি করেছেন এক ভুক্তভোগী নারী, যিনি তার বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর কাছেও লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগ অনুযায়ী, ৩ বছর প্রেমের সম্পর্কের একপর্যায়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে মেরাজুল। পরে ওই নারীর মোবাইল থেকে গোপন ছবি চুরি করে ব্ল্যাকমেইল করে দুই লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় এবং পরবর্তীতে আরও টাকা দাবি করে হুমকি দেয়। এছাড়াও, গোপালগঞ্জ সদর থানায় মিথ্যা অভিযোগপত্রে নাম ঢুকিয়ে মামলার ভয় দেখিয়ে রাজৈর উপজেলার ইউপি সদস্য মোখলেস মিনার কাছেও মোটা অংকের টাকা দাবির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তবে সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মেরাজুল ইসলাম। তিনি দাবি করেন, কিন্ডারগার্টেন স্কুলের বহিষ্কার, নারীদের কুপ্রস্তাব বা অবৈধ বালু ব্যবসার কোনো অভিযোগই সত্য নয়। ফাঁস হওয়া ভিডিও রেকর্ডের বিষয়ে তিনি যুক্তি দেন, তার একটি ফোন হারিয়ে গেছে এবং সেই ফোনে কী ছিল না ছিল তা তিনি জানেন না।
রাজৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহফুজুল হক অবৈধ বালু উত্তোলনের অভিযোগের বিষয়টি অবগত আছেন এবং দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন। মাদারীপুর জেলার এনসিপির যুগ্ম সমন্বয়কারী আজগর শেখ মেরাজুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন।
