রাজনীতি

হাইকোর্ট রিট উপেক্ষা: পার্কের নামে বাড়ি ভাঙায় বৃদ্ধ সিসিইউতে, প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা

হাইকোর্ট রিট উপেক্ষা: পার্কের নামে বাড়ি ভাঙায় বৃদ্ধ সিসিইউতে, প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা

সড়ক ও সেতুর টোল আদায়ে আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী এবং নেতাদের মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর অবৈধ কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা দেশের রাজস্ব খাতে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম এবং কুখ্যাত জিয়াউল আহসানসহ প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রছায়ায় এসব কোম্পানি দীর্ঘ সময় ধরে অবৈধভাবে টোল আদায়ের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে।

আওয়ামী শাসনামলের সাড়ে ১৫ বছর ধরে ইউডিসি, সিএনএস, শামীম এন্টারপ্রাইজ, সেল ভান, রেগনাম, এটিটি এবং পেন্টা গ্লোবালের মতো কোম্পানিগুলো টোল কালেকশন করে অর্ধেকের বেশি টাকা নিজেদের পকেটে পুরত। কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তারা টোল কালেকশনের ৫০ শতাংশ জমা দিত আর ৫০ শতাংশ লুটপাট করত, যেখানে ভারতীয় পার্টনার ভ্যান ইনফ্রার সহযোগিতাও ছিল। ক্ষমতা ও প্রভাবের কারণে তাদের কার্যক্রমের সঠিক অডিটও করা হতো না।

এসব দুর্নীতির কৌশলের ভয়াবহতা প্রকাশ পেয়েছে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের কোম্পানি সিএনএস-এর ক্ষেত্রে। তারা দলীয় প্রভাব খাটিয়ে টেন্ডার ছাড়াই দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সুবিধা নিয়ে ২৪ শতাংশ রেশিওতে শুধু যমুনা সেতুর টোল আদায় করেছে। সিএনএস এখনও ভৈরব, ঘোড়াশাল ও লেবুখালী সেতুর টোল নিয়ন্ত্রণ করছে। একই ভাবে মির্জা আজমের নিয়ন্ত্রণাধীন ইউডিসি কনস্ট্রাকশন মেঘনা-গোমতী সেতু, রূপসা সেতু, লালন শাহ সেতুসহ দেশের একাধিক সেতুর টোল নিয়ন্ত্রণ করছে।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সম্প্রতি মেঘনা-গোমতী সেতুতে টোল আদায়ে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগে সিএনএসের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। এতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক ছয় মন্ত্রী ও সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ মোট ১৭ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, একক উৎসভিত্তিক চুক্তির মাধ্যমে সিএনএসকে দায়িত্ব দেওয়ায় সরকারের ৩০৯ কোটি টাকার বেশি আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের আশীর্বাদপুষ্ট এশিয়ান ট্রাফিক টেকনোলজি (এটিটি) এবং রেগনাম রিসোর্সও একই ধরনের দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে।

জানা যায়, সাবেক যোগাযোগ সচিব নজরুল ইসলাম অনিয়মের কারণে টেন্ডার বাতিল করে দিলেও তিনি অবসরে গেলে নতুন সচিবকে ম্যানেজ করে বাতিল টেন্ডার পুনরায় চালু করে এই কোম্পানিগুলো। টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান মনে করেন, রাজনীতিকদের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট আমলাদের জোরালো যোগসাজশ ছিল বলেই এ ধরনের দুর্নীতি সম্ভব হয়েছে এবং আমলাদেরও জবাবদিহির আওতায় আনা প্রয়োজন। যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মো. হাদিউজ্জামান রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা পরিহার করে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় টেন্ডার দেওয়ার মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব ক্ষতির লাগাম টানার আহ্বান জানান।

জুলাই বিপ্লবের পরও এই কোম্পানিগুলো বর্তমান প্রশাসনকে অবৈধ সুবিধা দিয়ে এবং দরপত্রগুলো এমনভাবে প্রণয়ন করে যেন নতুন কোনো কোম্পানি অংশ নিতে না পারে, সেই কৌশলে টোলপ্লাজাগুলোতে নিজেদের কর্তৃত্ব বজায় রেখেছে।