সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্তে এক যুগের দীর্ঘসূত্রিতা পেরিয়ে হাইকোর্ট এবার কঠোর অবস্থান নিলেন। এই আলোচিত মামলার তদন্তের জন্য গঠিত টাস্কফোর্সকে আদালত 'শেষবারের মতো' আরও ছয় মাস সময় দিয়েছেন। বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি ফাতেমা আনোয়ারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) এই আদেশ দেন, যেখানে স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে ছয় মাসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতেই হবে।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারে খুন হন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার এবং এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি। এই হত্যাকাণ্ডের পর রুনির ভাই নওশের আলী রোমান শেরেবাংলা নগর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। দুই মাস পর হাইকোর্টের আদেশে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল র্যাবকে। কিন্তু র্যাব গত এক যুগেও মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি।
এই দীর্ঘসূত্রিতা ও তদন্তে ব্যর্থতার পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট জনস্বার্থে দায়ের করা রিটের শুনানিতে তদন্তভার র্যাব থেকে সরিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি উচ্চপর্যায়ের টাস্কফোর্স গঠনের নির্দেশ দেন। এই টাস্কফোর্সের আহ্বায়ক করা হয় পিবিআই প্রধানকে এবং অন্যান্য সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করা হয় পুলিশ ও র্যাবের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে।
আইনজীবী মনজিল মোরসেদ জানান, সাগর-রুনি মামলার তদন্ত সঠিকভাবে করা এবং আসামিদের আইনের আওতায় আনার জন্য ২০১২ সালে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে একটি রিট দায়ের করা হয়েছিল। সেই রিটের শুনানি নিয়ে আদালত রুল জারি করেছিলেন, যেখানে জানতে চাওয়া হয়েছিল—সাগর-রুনি হত্যা মামলার খুনিদের শনাক্ত করে কেন তাদের আইনের আওতায় আনার নির্দেশ দেওয়া হবে না।
প্রথমবারের সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পর গত ২২ এপ্রিল রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে আরও ছয় মাস সময় দেওয়া হয়েছিল। সেই ধারাবাহিকতায় এই রিট আবেদনটি আবার কার্যতালিকায় উঠলে আদালত এই 'শেষবারের মতো' আল্টিমেটাম দেন।
উল্লেখ্য, এ মামলার বাদী পক্ষে আইনি লড়াইয়ের জন্য গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর আইনজীবী শিশির মনিরকে নিযুক্ত করা হয়। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ঝুলে থাকা এই মামলার ভবিষ্যৎ এখন পুরোপুরি নির্ভর করছে হাইকোর্টের নির্দেশিত এই ছয় মাসের সময়সীমার ওপর। দেশের সাধারণ জনগণ এবং সাংবাদিক সমাজ আশা করছেন, টাস্কফোর্স এবার তাদের দায়িত্ব পালনে সফল হবে এবং খুনিরা অবশেষে আইনের আওতায় আসবে।
