বাংলাদেশের শিপিং খাতে ইসরাইলের গোপন বাণিজ্যিক অনুপ্রবেশ এবং তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে দেশের নিরাপত্তার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। আন্তর্জাতিক কনটেইনার পরিবহনে পরিচিত ট্রাইডেন্ট শিপিং লাইন লিমিটেড গোপনে ইসরাইলের অন্যতম বৃহৎ শিপিং কোম্পানি জেডআইএম ইন্টিগ্রেটেড শিপিং সার্ভিসেস লিমিটেডের বাংলাদেশ প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছে।
ট্রাইডেন্টের অফিশিয়াল তথ্যমতে, এটি হংকংভিত্তিক গোল্ড স্টার লাইন লিমিটেড এবং স্থানীয় বাংলাদেশি অংশীদারদের যৌথ উদ্যোগে ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু জেডআইএমের ওয়েবসাইটে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে ট্রাইডেন্টের আটজন কর্মকর্তার নাম ও ছবি প্রকাশ করা হয়েছে, যেখানে ফারুবার আনোয়ারকে কান্ট্রি ম্যানেজার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে স্পষ্ট যে, বাংলাদেশের বন্দরে ইসরাইলের একটি অঘোষিত বলয় তৈরি হয়েছে।
এই সম্পর্কের গভীরতা শুধু বাণিজ্যিক নয়, বরং কৌশলগত তথ্যের আদান-প্রদানকেও ছাড়িয়ে গেছে। গত ১২ এপ্রিল ঢাকায় অনুষ্ঠিত 'মার্চ ফর গাজা' কর্মসূচির বিস্তারিত তথ্য ট্রাইডেন্টের ঢাকা অফিস থেকে সরাসরি জেডআইএমের হাইফা সদর দপ্তরে ই-মেইল করা হয়েছিল। ট্রাইডেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুবার আনোয়ার এই মেইলে আঞ্চলিক প্রতিনিধি দোতান সারকে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, এক লাখেরও বেশি মানুষের অংশগ্রহণ, ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি এবং ইসরাইলি পণ্য বর্জনের স্লোগানের মতো সংবেদনশীল বিষয়গুলো অবহিত করেন। এই ধরনের তথ্য আদান-প্রদান শুধু 'এজেন্ট-প্রিন্সিপাল' সম্পর্কের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না।
সূত্র বলছে, জেডআইএমের আঞ্চলিক প্রতিনিধি দোতান সার ট্রাইডেন্টের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন এবং দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি কৌশলগত বন্দরের সিদ্ধান্ত সমন্বয় করেন। এই যোগাযোগের মধ্যে বিশেষ কিছু পণ্যবাহী রুট নির্ধারণ এবং কনটেইনার স্ক্যানিং সংক্রান্ত নির্দেশনাও অন্তর্ভুক্ত বলে জানা যায়।
জেডআইএমের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কথা অস্বীকার করলেও, ট্রাইডেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুবার আনোয়ার এবং পোর্ট ক্যাপ্টেইন আলী ইউসুফ এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। ট্রাইডেন্টের সাবেক একজন কর্মকর্তা দাবি করেন, দীর্ঘ ২২ বছর চাকরিতে থাকার সময় তিনি জেডআইএমের সঙ্গে ট্রাইডেন্টের কোনো সম্পর্ক দেখেননি।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বহুবার উল্লেখ করেছেন, জেডআইএম শুধু বাণিজ্যিক নয়; এটি ইসরাইলের রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা ও কূটনৈতিক সংযোগেও ভূমিকা রাখে। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও কুয়েতের মতো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রগুলো জেডআইএমের কার্যক্রমকে সন্দেহের চোখে দেখে তাদের বন্দর বন্ধ করে দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের শিপিং ডেটা অত্যন্ত সংবেদনশীল। ইসরাইলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক না থাকা সত্ত্বেও তাদের কোম্পানির এই গোপন উপস্থিতি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য চরম ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
