বিশ্ব

গাজায় ধ্বংসযজ্ঞে সামরিক-অর্থনৈতিক যোগান ৬৩ দেশের: আলবানিজের বিস্ফোরক রিপোর্ট

গাজায় ধ্বংসযজ্ঞে সামরিক-অর্থনৈতিক যোগান ৬৩ দেশের: আলবানিজের বিস্ফোরক রিপোর্ট

গাজায় চলমান ধ্বংসযজ্ঞকে 'নৃশংস গণহত্যা' আখ্যা দিয়ে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনবিষয়ক বিশেষ প্রতিবেদক ফ্রান্সেসকা আলবানিজ তার 'গাজা জেনোসাইড : এ কালেক্টিভ ক্রাইম' শীর্ষক প্রতিবেদনে বলেছেন, ইসরাইল একা নয়, বরং বিশ্বের ৬৩টি দেশ এই 'সামষ্টিক অপরাধের' সঙ্গে জড়িত। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, এসব দেশের রাজনৈতিক, সামরিক, অর্থনৈতিক ও মানবিক সহায়তায় গাজার এই ট্র্যাজেডি টিকে আছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের সবচেয়ে বড় সামরিক অংশীদার, যা প্রতিবছর ৩.৩ বিলিয়ন ডলার সামরিক অনুদান নিশ্চিত করছে এবং ২০২৮ সাল পর্যন্ত ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষার জন্য অতিরিক্ত ৫০০ মিলিয়ন ডলারের নিশ্চয়তা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও ইতালি হলো ইসরাইলের প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী। ২৬টি দেশ অন্তত ১০ দফায় অস্ত্র ও গোলাবারুদের চালান পাঠিয়েছে এবং অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জার্মানি, যুক্তরাজ্যসহ ১৯টি দেশ এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের যন্ত্রাংশ সরবরাহ করেছে। এমনকি ইতালি, নেদারল্যান্ডস, ফ্রান্স ও মরক্কোর মতো দেশ তাদের বন্দর ব্যবহার করে অস্ত্র সরবরাহের অনুমতি দিয়েছে।

সামরিক সহায়তার পাশাপাশি ইসরাইলের বাণিজ্যও বৃদ্ধি পেয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ইসরাইলের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার এবং জার্মানি, পোল্যান্ড, গ্রীস, ইতালি, ডেনমার্কসহ কিছু ইউরোপীয় দেশ গাজায় গণহত্যা চলাকালীন ইসরাইলের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়িয়েছে। আরব দেশগুলোর মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিসর, জর্ডান এবং মরক্কোও বাণিজ্য বৃদ্ধি করেছে, যা লোহিত সাগরের রুট এড়িয়ে বিকল্প স্থলপথের মাধ্যমে ইসরাইলের বাণিজ্য সহজ করেছে।

কূটনৈতিক ক্ষেত্রেও সহযোগিতা ছিল চোখে পড়ার মতো। আলবানিজ জানান, যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে সাতবার ভেটো প্রয়োগ করে যুদ্ধবিরতি আলোচনা ব্যাহত করেছে। অধিকাংশ পশ্চিমা দেশ দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিকারাগুয়াকে আইসিজেতে সহায়তা করেনি এবং তারা এখনো ইসরাইলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ স্বীকার করছে না। এমনকি এসব দেশ আইসিজেতে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও তার সরকারের অন্য সদস্যদের বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেফতারি পরোয়ানাকে বাধাগ্রস্ত করেছে। অন্যদিকে, ইসরাইলের অভিযোগে ১৮টি দেশ জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য ত্রাণ ও কর্মসংস্থার (ইউএনআরডব্লিউএ)-এর তহবিল স্থগিত করে গাজায় মানবিক সংকট সৃষ্টিতে সাহায্য করেছে।

আলবানিজ জোর দিয়ে বলেন, গাজায় গণহত্যা-সদৃশ সহিংসতা দৃশ্যমান হওয়ার পরেও বেশিরভাগ পশ্চিমা রাষ্ট্র ইসরাইলকে সামরিক, কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং মানবিক সহায়তা প্রদান অব্যাহত রেখেছে। এই সম্মিলিত নীরবতা এবং সহযোগিতা ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ৬৮,২০০-এরও বেশি ফিলিস্তিনির নিহত হওয়ার পথকে সুগম করেছে, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।