তেল সমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের গুরুত্বপূর্ণ দেশ কাতার এখন কেবল শ্রমবাজার বা এলএনজি আমদানির গণ্ডি পেরিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে কৌশলগত ও রাজনৈতিক সম্পর্ককেও নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে চাইছে। জুলাই অভ্যুত্থানের পর দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ প্রক্রিয়ায় ঢাকাকে সহযোগিতার প্রস্তাব দেওয়ায় এই সম্পর্কের গুরুত্ব স্পষ্ট হয়েছে। পাশাপাশি, মধ্যস্থতা কূটনীতিতে নিজেদের সক্রিয়তা ধরে রেখে কাতার রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানেও বাংলাদেশের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছে।
গত বছর অভ্যুত্থানের পর চলতি বছরের জানুয়ারিতে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে লন্ডন যেতে হয়, তখন কাতারের আমির বিশেষ রয়্যাল এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়েছিলেন। সেই এয়ার অ্যাম্বুলেন্সেই তিনি ঢাকা ফেরেন। এর বাইরে গত এপ্রিলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাতার সফরকেও দোহা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। এই সফরের মূল লক্ষ্য ছিল জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় এলএনজি আমদানি বৃদ্ধি এবং বাংলাদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানো। এই আগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতেই বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা কাতারের বিনিয়োগকারীদের জন্য আলাদা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) তৈরির ঘোষণা দেন।
কাতারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হযরত আলী খান নিশ্চিত করেছেন যে, দু'দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক বর্তমানে অত্যন্ত চমৎকার। প্রধান উপদেষ্টার সফল কাতার সফর এবং তার আগে কাতারের আমিরের বাংলাদেশ সফর—এই দুই উচ্চপর্যায়ের যোগাযোগ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের গভীরতাকেই নির্দেশ করে। রাষ্ট্রদূত আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, সময়ের সাথে এই সম্পর্ক আরও বাড়বে।
ঐতিহ্যগতভাবে মুসলিম বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক বজায় রাখলেও, বাংলাদেশের সঙ্গে কাতারের সম্পর্ক এখন কৌশলগত দিকে ঝুঁকছে। রাষ্ট্রদূত জানান, বাংলাদেশের গণতন্ত্র সুবিন্যস্তকরণে কোনো প্রয়োজন দেখা দিলে, কাতারের প্রধানমন্ত্রী নিজেই প্রধান উপদেষ্টাকে তাদের পাশে পাওয়ার কথা জানিয়েছেন। ফিলিস্তিন ইস্যুতে সক্রিয়ভাবে মধ্যস্থতা করার কারণে কাতারের অবস্থান আন্তর্জাতিক মহলে পরিচিত। এই মধ্যস্থতা কূটনীতির মাধ্যমেই দেশটি রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানেও ভূমিকা রাখতে আগ্রহী। বর্তমানে প্রায় পাঁচ লাখ বাংলাদেশি কাতারে কাজ করে দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহকে শক্তিশালী করছে। ধারণা করা হচ্ছে, অর্থনৈতিক সম্পর্কের পাশাপাশি কৌশলগত দ্বিপাক্ষিক পররাষ্ট্রনীতি এবং রাজনৈতিক সম্পর্কও এই ইতিবাচক আবহে সমান্তরালে এগিয়ে চলবে।
