রাজনীতি

কুলখানি, আপ্যায়ন খাতে বিপুল ব্যয় দেখিয়ে দেড় কোটি টাকা লোপাট: আগারগাঁও বাজার সমিতির বিরুদ্ধে ভুয়া বিলের অভিযোগ

কুলখানি, আপ্যায়ন খাতে বিপুল ব্যয় দেখিয়ে দেড় কোটি টাকা লোপাট: আগারগাঁও বাজার সমিতির বিরুদ্ধে ভুয়া বিলের অভিযোগ

রাজধানীর আগারগাঁও বাজার বণিক সমবায় সমিতির ব্যবস্থাপনা কমিটির বিরুদ্ধে সদস্যদের আমানতের বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। সমিতির সদস্যরা দাবি করেছেন, নেতারা গত দুই অর্থবছরে প্রায় দেড় কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন, যার মধ্যে অস্বাভাবিক বিদ্যুৎ বিল এবং কুলখানি ও মিলাদের মতো অযৌক্তিক খাতের ব্যয় দেখানো হয়েছে। এই অভিযোগের বিষয়ে জেলা সমবায় কর্মকর্তার কার্যালয়ে লিখিত তদন্ত চলছে।

সমিতির সদস্যরা অভিযোগ করেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রকৃত বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের চেয়ে প্রায় দুই লাখ টাকা বেশি ব্যয় দেখিয়ে নেতারা সেই অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। এর বাইরে কুলখানি, মিলাদ মাহফিল ও অনুদান বাবদ ৬ লাখ ৩৩ হাজার টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে, যেখানে মৃত ব্যক্তির পরিবার নয়, বরং সমিতির টাকায় কুলখানি আয়োজনের বিষয়টি সদস্যদের কাছে সম্পূর্ণ অজানা। সদস্যদের মতে, মিলাদ-কুলখানিতে অর্থ ব্যয়ের জন্য সদস্যদের কোনো অনুমোদন নেওয়া হয়নি এবং এই খাতে টাকা ব্যয়ের সুযোগ নেই।

অভিযোগকারী আরেক সদস্য ইসফাকুল কবির চৌধুরী আরও বলেন, কমিটির নেতারা সদস্যদের উপস্থিতির স্বাক্ষরকে প্রস্তাব অনুমোদনের স্বাক্ষর দেখিয়ে ভুয়া প্রতিবেদন দিয়েছেন। অধিকাংশ সদস্য আত্মসাতের বাজেট সমর্থন করেননি বলে তিনি দাবি করেন।

নেতারা আপ্যায়ন, প্রশাসনিক, সম্মানি ভাতা, মজুরি, মামলা পরিচালনা ও যাতায়াত—এই ছয় খাতেও অস্বাভাবিক ব্যয় দেখিয়েছেন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এসব খাতে প্রায় ২২ লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হয়, যার মধ্যে সম্মানি ভাতাতেই ৬ লাখ ৯৪ হাজার টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। সদস্যরা প্রশ্ন তুলেছেন, ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে যখন নতুন মার্কেট ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয় এবং সব দায়িত্ব গণপূর্ত ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের ওপর থাকে, তখন আপ্যায়ন কিংবা প্রশাসনিক খরচ ঠিকাদারের বহন করার কথা। তাদের মতে, এসব খাতে দেখানো বিপুল ব্যয় মূলত আত্মসাৎ করা হয়েছে।

এই অর্থ আত্মসাতে সমিতির সদস্যরা বর্তমান কমিটির বিএনপিপন্থী নেতাদের সঙ্গে অতীতে কমিটিতে থাকা আওয়ামী লীগপন্থী নেতাদের যোগসাজশ থাকার অভিযোগ করেছেন। তারা বলছেন, পটপরিবর্তনের পরও এই যোগসাজশ অব্যাহত থাকায় সদস্যরা প্রতিবাদ করেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না।

অতিরিক্ত প্রায় দুই লাখ টাকা বিদ্যুৎ বিলের বিষয়ে সমিতির সভাপতি এ বি এম নুরুল হক চৌধুরী দাবি করেন, বিদ্যুৎ বিল বেশি দেখানোর সুযোগ নেই। তিনি বলেন, কোনো কারণে অতিরিক্ত খরচ হলে তা সাপ্লিমেন্টারি হিসেবে দেখানো হয়েছে, যার অনুমোদন বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) নেওয়া হয়েছে। তবে তিনি পাল্টা অভিযোগ করেছেন যে, সমিতির চার সদস্যের একটি চক্র উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে।

ঢাকা জেলার সমবায় কর্মকর্তা এইচ এম সহিদ-উজ-জামান নিশ্চিত করেছেন, অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের জন্য একজন কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে এবং অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে দ্রুত প্রতিবেদন দেওয়া হবে। তবে প্রথম নিয়োগ করা কর্মকর্তাকে নিয়ে অভিযোগ ওঠায় অন্য একজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।