জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাসুদ কামাল তার ইউটিউব চ্যানেলে দেওয়া বক্তব্যে স্পষ্ট করেছেন যে, দলীয়ভাবে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় ১৯৭১ সালে জামায়াতে ইসলামীর বিতর্কিত ভূমিকার বিচার হওয়া উচিত। তিনি দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচারের প্রসঙ্গ টেনে এই আইনি ন্যায্যতার দাবি উত্থাপন করেন।
মাসুদ কামাল বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) আইনে এখন দলের বিচার করার সুযোগ যুক্ত করা হয়েছে, যা আগে ছিল না। তাই তিনি মনে করেন, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা জামায়াতের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন অথবা সরকারের উচিত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বিচারের জন্য আবেদন করা। তিনি জোর দিয়ে বলেন, যদি ২০২৪ সালের কোনো ঘটনার জন্য আওয়ামী লীগের বিচার করা যায়, তবে ১৯৭১ সালের গণহত্যার জন্য জামায়াতের বিচার করা যাবে না কেন?
তিনি মনে করেন, বিচার হওয়া আবশ্যক। যদি বিচার প্রক্রিয়ায় প্রমাণিত হয় যে জামায়াত একাত্তরে নির্দোষ ছিল, তবেই তারা দায়মুক্ত হবে। তিনি বলেন, বিচারের আওতায় আনলেই কোনো দল অপরাধী হয় না, কিন্তু বিচার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সত্য উদ্ঘাটিত হওয়া জরুরি।
যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া প্রসঙ্গে মাসুদ কামাল বলেন, এই ক্ষমা চাওয়ার চেয়ে বড় প্রশ্নটি হলো মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতের রাজনৈতিক ভূমিকা কী ছিল। তিনি স্বীকার করেন যে, দলের অনেক নেতার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হয়েছে, এমনকি তিনি নিজেও কিছু বিচারের আন্তর্জাতিক মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
কিন্তু দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর মূল ভূমিকার বিষয়টি অমীমাংসিত। তিনি যুক্তি দেন, জামায়াতে ইসলামী কি মুক্তিযুদ্ধের সময় এদেশের মুক্তির বিরোধিতা করেনি? তারা কি পাকিস্তানি বাহিনীকে সক্রিয়ভাবে সহায়তা করেনি? পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যা, ধর্ষণ ও অন্যান্য বর্বরতা সংঘটিত হয়েছিল, আর জামায়াতে ইসলামী কি তাতে সমর্থন দেয়নি? মাসুদ কামালের মতে, দল হিসেবে জামায়াতের উচিত তাদের একাত্তরের ভূমিকা নিয়ে প্রকাশ্যে আত্মসমালোচনা করা এবং স্বীকার করা যে, "আমার দল ওই সময় যে ভূমিকাটা রেখেছিল, সেই ভূমিকাটা ঠিক না।" ক্ষমা চাওয়ার আগে দলের ঐতিহাসিক ভূমিকার আইনি পর্যালোচনা হওয়া দরকার বলে তিনি মনে করেন।
