অন্তর্বর্তী সরকারের সাড়ে ১৪ মাস অতিবাহিত হলেও প্রত্যাশিত পরিবর্তন আসেনি বলে হতাশা প্রকাশ করেছেন দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। বিশেষ করে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস-এর ঘন ঘন বিদেশ সফর এবং তার ফলপ্রসূতা, উপদেষ্টাদের আর্থিক স্বচ্ছতা এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির গুরুতর অবনতি আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা এই ১৪ মাসে ১৩টি দেশে ১৪ বার সফর করেছেন। সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমেদ এ বিষয়ে প্রশ্ন তুলে বলেছেন, এসব সফর থেকে বাংলাদেশ কী পেয়েছে বা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে কতটা ভূমিকা রেখেছে? তিনি মন্তব্য করেন, প্রধান উপদেষ্টার এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ কাজ রয়েছে এবং তার বহুপাক্ষিক অনুষ্ঠানে বেশি যোগ দেওয়া নিয়ে মানুষ চিন্তিত। বিশেষ করে সর্বশেষ রোম সফর নিয়েও প্রোটোকল সংক্রান্ত প্রশ্ন উঠেছে।
পররাষ্ট্রনীতিতে কোনো কার্যকর পরিবর্তন আসেনি। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন দায়িত্ব নিলেও অনেক দেশই বাংলাদেশের পাসপোর্টে ভিসা দেওয়া বন্ধ রেখেছে বা কঠোর করেছে। ভারত সীমিত পরিসরে মেডিকেল ভিসা দিলেও ইউএই, উজবেকিস্তান, কাতার, ভিয়েতনাম, ওমান, কুয়েত, বাহারাইনসহ গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলো ভিসা দিচ্ছে না। সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমেদ মনে করেন, ভারত ভিসা বন্ধ করায় বহির্বিশ্বে খারাপ বার্তা গেছে এবং জঙ্গিবাদীদের বিস্তার নিয়ে বাইরে যে নেতিবাচক ধারণা ছড়িয়েছে, তা ভিসা সংকটের মূল কারণ। তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভূমিকার অভাবও লক্ষ্য করেছেন।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া এই সরকারের আরেকটি বড় ব্যর্থতা হলো উপদেষ্টাদের সম্পদের হিসাব প্রকাশ না করা। ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আক্ষেপ করে বলেছেন, নতুন নজির স্থাপনের যে প্রত্যাশা ছিল, দুঃখজনকভাবে তা হয়নি। অন্যদিকে, সরকারের সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব অবশ্য দাবি করেছেন, অধিকাংশ উপদেষ্টা হিসাব জমা দিয়েছেন এবং সময়মতো তা প্রকাশিত হবে।
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় সাবেক আইজিপি আশরাফুল হুদা হতাশা প্রকাশ করে বলেছেন, পুলিশের মনোবল ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি, ফলে পরিস্থিতির কাঙ্ক্ষিত উন্নতি হয়নি। বিচারাঙ্গনের স্বাধীনতার বিষয়ে সুপ্রিমকোর্টের প্রবীণ আইনজীবী জেড আই খান পান্না স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার জামিন সংক্রান্ত মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, এই বক্তব্যই প্রমাণ করে বিচার বিভাগ কিভাবে চলছে।
সড়ক-মহাসড়কের বেহাল দশাও অপরিবর্তিত। সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান নিজেও ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক পরিদর্শনে গিয়ে যানজটে আটকা পড়েন এবং পরে মোটরসাইকেলে গন্তব্যে পৌঁছান। যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, বিগত সরকারের সময়ের চেয়ে এখন সড়কের অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে, কারণ কোনো সংস্কার কাজ হচ্ছে না।
এছাড়াও, ছয়টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা আওয়ামী লীগের কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে চিঠি লিখেছে। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন অবশ্য জানিয়েছেন, সরকার এই বিষয়ে কোনো প্রতিবাদ করবে না, তবে সরকারের পক্ষে তাদের সব দাবি মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। এদিকে, গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, নতুন কোনো বিনিয়োগ আসেনি এবং ক্রেতারা আগামী নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে থাকায় তারা এখনও নগণ্য অর্ডার পাচ্ছেন।
