জুলাই সনদকে ঘিরে দেশের রাজনীতিতে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি'র মধ্যেকার ঐক্য এখন গভীর টানাপোড়েনের মুখে। সনদ স্বাক্ষরের সময়সীমা ৩১ অক্টোবর শেষ হওয়ার মুহূর্তে এই দলগুলোর মধ্যেকার মতবিরোধ চরমে উঠেছে। এই দ্বন্দ্বের প্রধান কারণ দুটি: গণভোটের মতো বিষয় এবং এনসিপি'র পক্ষ থেকে উত্থাপিত পিআর (সংখ্যাপাতিক প্রতিনিধিত্ব) প্রতারণা বিতর্ক।
এনসিপি নেতা নাহিদ ইসলামের ফেসবুক পোস্ট, যেখানে তিনি জামায়াতকে উদ্দেশ্য করে 'পিআর আন্দোলন ছিল একটি পরিকল্পিত রাজনৈতিক প্রতারণা' লিখেছিলেন, তা এই দ্বন্দ্বের আগুনে ঘি ঢেলেছে। এনসিপি’র সদস্য সচিব আখতার হোসেন এই বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ঐক্যমত্য কমিশনের আলোচনায় নিম্নকক্ষের পিআর-কে প্রধান এজেন্ডা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছিল। এতে সংস্কারের সামগ্রিক আলোচনা গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছিল—নাহিদ ইসলাম সেই বাস্তবতাটিই তুলে ধরেছেন।
অন্যদিকে, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ কঠোরভাবে এই বক্তব্যের জবাব দেন। তিনি বলেন, যারা পিআর-কে 'দলীয় এজেন্ডা' বলছেন, তাদের উচিত পিআর পদ্ধতির বিপক্ষে অবস্থান নিচ্ছেন কিনা তা স্পষ্ট করা। তিনি জোর দিয়ে বলেন, জামায়াত সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে আন্তরিকতার সঙ্গেই পিআর পদ্ধতির দাবি করেছিল, কোনো অসৎ উদ্দেশ্যে নয়।
এই বিতর্কের মধ্যে এনসিপি'র প্রতি চরম সমালোচনা করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমদ। তিনি এনসিপি-কে 'নতুন দল' উল্লেখ করে তাদের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার অভাব তুলে ধরেন। হাফিজ উদ্দিনের মতে, এনসিপি মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়ে ভুল করেছে; তারা বাইরে থাকলে গণ-অভ্যুত্থানের প্রতি জনসমর্থন আরও বাড়ত। তবে তিনি আশা প্রকাশ করেন, গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সৃষ্ট নতুন রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সব দল ছাড়ের মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসবে।
এনসিপি তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে জানিয়েছে, সনদে স্বাক্ষর করার আগে তাদের তিনটি শর্ত পূরণ হতে হবে: সনদের আইনি ভিত্তি প্রদান, তা বাস্তবায়নে একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ তৈরি হওয়া এবং ঐক্যমত্য কমিশনের আলোচনায় অংশগ্রহণ। আখতার হোসেনের মতে, যদি এই শর্তগুলো পূরণ না হয়, তবে দেশের জনগণকে সাথে নিয়ে তারা পরবর্তী কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবেন।
