জাতীয়

শিরীন শারমিন: নতুন পাসপোর্টের চেষ্টা ব্যর্থ, আত্মগোপন নিয়ে দ্বন্দ্বে গোয়েন্দারা

শিরীন শারমিন: নতুন পাসপোর্টের চেষ্টা ব্যর্থ, আত্মগোপন নিয়ে দ্বন্দ্বে গোয়েন্দারা

সাবেক স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর বর্তমান অবস্থান নিয়ে সরকারের ভেতরেই এক ধরনের অস্পষ্টতা এবং টানাপোড়েন চলছে। স্বরাষ্ট্র, আইন মন্ত্রণালয় এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে তার বিষয়ে হালনাগাদ কোনো অফিসিয়াল তথ্য নেই। কারো কারো গুঞ্জন, তিনি স্বামীসহ স্থলপথে ভারত বা পার্শ্ববর্তী কোনো দেশে আশ্রয় নিয়েছেন। তবে ঢাকাতেই সুরক্ষিত স্থানে তার ভাইয়ের বাসায় থাকার দাবিও রয়েছে। এই দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যেই অন্তর্বর্তী সরকার তার বিরুদ্ধে হওয়া হত্যা মামলার তদন্ত শেষ না হওয়ায় আইনি ব্যবস্থা নিতে দ্বিধায় রয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা কঠোর মনোভাব পোষণ করে জানিয়েছেন, দীর্ঘ চার মেয়াদে স্পিকার হিসেবে তিনি শেখ হাসিনার সব 'অপকর্মের বৈধতা' দিয়েছেন এবং আদালতের নির্দেশনা পেলে তারা তাকে গ্রেপ্তারে প্রস্তুত। তবে কর্মকর্তারা কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিলের পর গোপনে শিরীন শারমিনকে সাধারণ পাসপোর্ট দেওয়ার প্রক্রিয়ায় জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে না পারার ব্যর্থতা স্বীকার করেছেন, যার কারণ হিসেবে সরকারের নীতিনির্ধারকদের সিদ্ধান্তহীনতাকে দায়ী করা হয়েছে।

এদিকে, আইন মন্ত্রণালয় স্পষ্ট করেছে যে শিরীন শারমিনের বিরুদ্ধে দুটি সুনির্দিষ্ট মামলা হয়েছে এবং তদন্তের দায়িত্ব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দাখিল করা হলে আদালত পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে। এই হত্যা মামলাটি ২০২৪ সালের ২৭ আগস্ট রংপুর মেট্রোপলিটন আদালতে দায়ের করেন দিলরুবা আক্তার, যেখানে তিনি অভিযোগ করেন যে সাবেক স্পিকারের নির্দেশে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা তার স্বামী মুসলিম উদ্দিনকে হত্যা করেছে। মামলার বাদী ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, সিআইডি তদন্ত করছে বললেও এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি বা তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে তাকে জানানো হয়নি। তবে সিআইডির ইনস্পেক্টর সামিউল আলম দ্রুত চার্জশিট দাখিলের আশ্বাস দিয়েছেন।

সাবেক স্পিকার শিরীন শারমিন অত্যন্ত গোপনে নতুন সাধারণ ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করে আঙুলের ছাপ এবং আইরিস দেন বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন শাখা নিশ্চিত করেছে। তবে এই আবেদন বাতিল করা হয়েছে। কর্মকর্তারা জানান, ধানমন্ডির যে ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছিল, সেখানেও তিনি অবস্থান করছেন না। এই কাজে পাসপোর্ট অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করে তাদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে। অন্যদিকে, একটি গোয়েন্দা সংস্থা দাবি করেছে যে তিনি কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিলের পর সাধারণ পাসপোর্ট নেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন এবং বর্তমানে দেশে নেই, বরং স্থলপথে পার্শ্ববর্তী দেশে অবৈধভাবে পাড়ি জমিয়েছেন।

উল্লেখ্য, গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর ২৭ দিন পর, গত ২ সেপ্টেম্বর শিরীন শারমিন অজ্ঞাত স্থান থেকে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠান, যা সঙ্গে সঙ্গেই গৃহীত হয়। তার সহকর্মী আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন তাকে একজন হত্যা মামলার আসামি হিসেবে আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আদালতে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়েছেন।