শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে নৃশংস হামলার শিকার এক বৃদ্ধের আঙুল বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরও মামলা নথিভুক্ত না হওয়ায় সখিপুর থানার পুলিশের ভূমিকা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে। গত ২০ অক্টোবর সোমবার সকালে ডিএমখালি কাদির সরকার কান্দি এলাকায় এই হামলার ঘটনা ঘটে, যেখানে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ৬৫ বছর বয়সী ভুক্তভোগী আনোয়ার হোসেন মাদবরের ডান হাতের দুটি আঙুল সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
ভুক্তভোগী আনোয়ার হোসেন মাদবর হামলার দিনই সুমন মাদবর সহ ৭ জনের বিরুদ্ধে সখিপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পরিবারের অভিযোগ, ঘটনার পরপরই তারা মামলা করতে গেলেও পুলিশ মামলা না নিয়ে শুধু অভিযোগ রেখে দেয়। পরদিন থেকে টানা পাঁচ দিন তারা থানার তদন্ত কর্মকর্তা এস আই রিপনের কাছে ঘুরতে থাকেন, কিন্তু তিনি নানান অজুহাতে তাদের ফিরিয়ে দেন। ভুক্তভোগী পরিবারের দাবি, শুক্রবার রাত ১০টা পর্যন্ত থানায় বসিয়ে রাখার পরও এস আই রিপন মামলাটি নথিভুক্ত করেননি, বরং তাদের প্রতি অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন।
আনোয়ার মাদবরের প্রতিবেশী সিরাজ মাদবর এই ঘটনায় পুলিশের গাফিলতির তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি অভিযোগ করেন, মূল অভিযুক্ত সুমন মাদবর একজন সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ এবং তার বিরুদ্ধে এলাকায় বহু অভিযোগ রয়েছে। সিরাজ মাদবর আরও বলেন, সুমন পুলিশকে টাকা-পয়সা দিয়ে মামলা ধামাচাপা দেয় এবং উল্টো পুলিশকে দিয়ে ভুক্তভোগীদের হয়রানি করে। এভাবে প্রকাশ্যে হামলার পরও মামলা না নেওয়া আইনের প্রতি মানুষের বিশ্বাস নষ্ট করছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
মামলা নথিভুক্ত না হওয়ার বিষয়ে সখিপুর থানার তদন্ত কর্মকর্তা এস আই রিপন সাংবাদিকদের বলেন, অভিযোগের কপি তার কাছে আছে এবং তিনি বাদীপক্ষের সাথে আসামিদের মিমাংসার চেষ্টা করছেন। একটি গুরুতর শারীরিক আঘাত ও অঙ্গহানির ঘটনায় পুলিশের মিমাংসার কথা বলার এখতিয়ার আছে কিনা—এমন প্রশ্নে এস আই রিপন কথা এড়িয়ে গিয়ে বলেন, ঘটনাটি তদন্তাধীন রয়েছে এবং তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্যদিকে, থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফয়েজ আহমেদ এই বিষয়ে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকেন।
আনোয়ার মাদবরের স্ত্রী ও ভাই জানান, আসামিপক্ষ প্রতিনিয়ত তাদের হুমকি দিচ্ছে, কিন্তু পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তারা অবিলম্বে ন্যায়বিচার এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। এই ঘটনায় পুলিশের দায়িত্বে অবহেলা এবং অভিযুক্তদের সাথে যোগসাজশের অভিযোগ স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে।
সহকারী পুলিশ সুপার (ভেদরগঞ্জ) সার্কেল সৌম্য শেখর পাল এই গুরুতর বিষয়ে নজর দিয়ে বলেন, এইধরনের ঘটনায় অবশ্যই মামলা হবে এবং তিনি দ্রুত খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
