দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর ধরে বাংলা চলচ্চিত্রের হার্টথ্রব নায়ক সালমান শাহর মৃত্যু-রহস্যের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা মানসিক যন্ত্রণার অবসান চান অভিনেতা ডন। সালমান শাহর মৃত্যুর মামলাটিকে আদালত হত্যা মামলা হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেওয়ার পর পরই আসামি ডন আগামী দু-এক দিনের মধ্যেই পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণের ঘোষণা দিয়েছেন। তার মতে, "৩০ বছর ধরে যন্ত্রণা ভোগ করছি। এর একটা সুরাহা হওয়া দরকার।"
গত ২০ অক্টোবর ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জান্নাতুল ফেরদৌস ইবনে হক মামলাটিকে হত্যা মামলা হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দিলে ২১ অক্টোবর সালমান শাহর মামা আলমগীর কুমকুম রমনা থানায় মামলাটি করেন। মামলায় সালমান শাহর স্ত্রী সামিরাসহ ১১ জনকে আসামি করা হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে ডন তার আত্মসমর্পণের কথা জানান এবং পালানোর খবরকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেন।
ডন আক্ষেপ করে বলেন, তিনি চলচ্চিত্রকে ভালোবেসে ঘর ছেড়েছিলেন এবং অভিনয়ের ভালো সুযোগ পাওয়ার আশায় সালমান শাহর সঙ্গে জুটি গড়েছিলেন। মা-বউয়ের ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত মানুষটির (সালমান শাহ) সুখ-দুঃখের সাথী হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সালমানকে ভালোবেসে তার নিজের ক্যারিয়ারের বারোটা বেজেছে এবং তিনি আজও ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি। তিনি বলেন, "সালমানকে ভালোবাসার যন্ত্রণা আর সইতে পারছি না। আমিও তো মানুষ, আমারও তো বাঁচতে ইচ্ছে করে।"
এই অভিনেতা প্রশ্ন তোলেন, "সালমানকে ভালোবেসে অনেকেই আত্মহত্যা করেছে, আমি করিনি—এটাই কি আমার অপরাধ?" তার এই মন্তব্য তার ওপর চাপানো দীর্ঘদিনের মানসিক চাপ ও সামাজিক অপবাদের দিকে ইঙ্গিত করে। তিনি বিশ্বাস করেন, ওপরে একজন আছেন, যিনি সব দেখেন এবং একদিন সত্য প্রকাশ হবেই।
মৃত্যুর ঠিক আগে আগে সালমান শাহর সঙ্গে শেষ কথাগুলোর স্মৃতিচারণ করে ডন বলেন, ৩০ আগস্ট তিনি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছিলেন এবং সালমান তাকে পরিচালক শিবলী সাদিককে বার্তা দিতে বলেছিলেন যে তিনি ৩ সেপ্টেম্বর ঢাকায় এসে 'আনন্দ অশ্রু' ছবির শুটিংয়ে অংশ নেবেন। বাস ধর্মঘটের কারণে তিনি সময়মতো ঢাকায় ফিরতে পারেননি, এবং ৬ সেপ্টেম্বর জানতে পারেন মর্মান্তিক খবরটি। নব্বইয়ের দশকের চলচ্চিত্রের ধূমকেতু সালমান শাহ মাত্র সাড়ে তিন বছরের অভিনয় জীবনে দর্শকদের মন জয় করে নিলেও, তার মৃত্যুর রহস্য আজও অমীমাংসিত। ডনের এই আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত সেই রহস্যের সমাধানে এক নতুন দরজা উন্মোচন করতে পারে।
