রাজনীতি

কওমি ৫ দলের আসন দাবি প্রায় ২৫০টি; জামায়াত ছাড়ছে শতাধিক

কওমি ৫ দলের আসন দাবি প্রায় ২৫০টি; জামায়াত ছাড়ছে শতাধিক

দীর্ঘদিনের আদর্শিক দূরত্ব সরিয়ে দিয়ে এবার নির্বাচনী সমঝোতার পথে হাঁটছে কওমি ঘরানার পাঁচটি ইসলামপন্থী দল ও জামায়াতে ইসলামী। এই সমঝোতার ফলে দেশের নির্বাচনী রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। জাতীয়তাবাদ ও ইসলামী মূল্যবোধের আদর্শে বিএনপির সাথে ইসলামপন্থী দলগুলোর সুসম্পর্ক থাকলেও, বর্তমানে সেই সম্পর্কে ছেদ পড়ায় এই নতুন জোট গড়ার প্রচেষ্টা।

ইসলামী আন্দোলন, মামুনুল হকের খেলাফত মজলিসসহ মোট পাঁচটি দল জামায়াতের সাথে আসন সমঝোতায় যেতে আগ্রহী। এই কওমি ঘরানার দলগুলো ঐতিহাসিকভাবে দেওবন্দ আর্দশের অনুসারী হলেও, মওদুদী মতবাদের সঙ্গে বহুদিনের বিরোধ থাকা সত্ত্বেও তারা বৃহত্তর ইসলামী রাষ্ট্র গড়ার অভিপ্রায় থেকে জোটের পথে হাঁটছে।

আসন সমঝোতার বিষয়ে শরিক দলগুলোর দাবি বেশ বড়। ইসলামী আন্দোলন অন্তত একশ আসন, মামুনুল হকের খেলাফত মজলিস ৫০টি, এবং বাকি তিন দলের মোট ৭০ থেকে ৮০টি আসন দাবি রয়েছে। এর বিপরীতে জামায়াতে ইসলামী শরিকদের কাছে শতাধিক আসন ছাড়ের প্রস্তাব দিয়েছে। বাংলাদেশ খেলাফত মজিলসের আমির মামুনুল হক জানান, তাদের অর্ধশতাধিক প্রার্থী ভালো অবস্থান নিয়ে নির্বাচনী মাঠে কাজ করছেন। ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব ইউনুছ আহমাদ জানান, তফসিলের পরপরই এই সমঝোতার অবস্থান স্পষ্ট করা হবে এবং ইসলামের পক্ষে একজন প্রার্থীর প্রাধান্য নিশ্চিত করা হবে।

জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ জানিয়েছেন, দেশপ্রেম, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতান্ত্রিক রাজনীতি করে এমন দলের সাথে তাদের রাজনৈতিক ও নির্বাচনী সমঝোতা হবে। তবে জোটের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে ভোটের তফসিল ঘোষণার পর। এখন চলছে প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ।

এদিকে, এই ইসলামীপন্থী জোটের কার্যক্রম বিএনপি শিবিরে তেমন উদ্বেগ তৈরি করতে পারেনি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হাফিজ উদ্দিন এই জোটের প্রভাবকে তুচ্ছ করে বলেন, "অনেক জিরো প্লাস জিরো প্লাস জিরো ইজ জিরো।" তিনি আরও মন্তব্য করেন, বিএনপিও ইসলামিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী একটি দল এবং নির্বাচনের আগে ইসলামের জিকির তোলা দেশের জন্য সঠিক আচরণ নয়। তিনি জামায়াতকে শক্তিশালী দল বলেও মনে করেন না।

অন্যদিকে, বিএনপিও নীরব বসে নেই। তারা এই কৌশলের পাল্টা জবাব দিতে দেওবন্দ আর্দশের ইসলামী বিভিন্ন গোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছে। এরইমধ্যে কওমি ঘরানার সবচেয়ে পুরনো দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলামীর চার নেতাকে নির্বাচনী কাজে নামার সবুজ সংকেত দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

এই ইসলামীপন্থী জোটের আসন সমঝোতা সম্পন্ন হলেও, জোট ক্ষমতায় গেলে কে প্রধানমন্ত্রী বা বিরোধী দলীয় নেতা হবেন, সে বিষয়ে এখনও কোনো সুরাহা হয়নি।