ফরিদপুরের তিনটি উপজেলা ও পৌর শাখায় বিএনপির কমিটি ঘোষণার পর দলের ত্যাগী ও মাঠের নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। সদ্য ঘোষিত এসব কমিটিতে আওয়ামী লীগ এবং তার অঙ্গসংগঠনের অন্তত ১৫ জন পদধারী নেতা ও ১২ জন কর্মী স্থান পাওয়ায় ক্ষুব্ধ পদবঞ্চিতরা বিক্ষোভ সমাবেশ ও মশাল মিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন।
নবগঠিত কমিটিতে হাইব্রিড নেতার অনুপ্রবেশ অত্যন্ত স্পষ্ট। আলফাডাঙ্গা উপজেলা কমিটিতে আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক মিয়া আসাদুজ্জামান (আসাদ মাস্টার), যিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন, সহসভাপতির মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে এসেছেন। উপজেলা কৃষক লীগের সহসভাপতি মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান (মাসুদ মাস্টার) সহসভাপতি এবং যুবলীগের প্রচার সম্পাদক মো. জাকার মেম্বার সহসমবায় বিষয়ক সম্পাদক পদ পেয়েছেন। বোয়ালমারী এবং মধুখালী উপজেলা কমিটিতেও একাধিক আওয়ামী লীগ কর্মী এবং নেতাকে বিভিন্ন পদে স্থান দেওয়া হয়েছে।
বোয়ালমারী উপজেলা বিএনপির কোষাধ্যক্ষের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে অমিত সাহা-কে, যার সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আবদুর রহমানের ঘনিষ্ঠতার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সবচেয়ে বেশি সমালোচিত হচ্ছে সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন-অর-রশিদের ক্যাশিয়ার মিজানুর রহমান সোনা মিয়া-কে নির্বাহী সদস্য করার বিষয়টি।
মধুখালী উপজেলায় মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদকের ঘনিষ্ঠ এবং আওয়ামী লীগ মনোনীত নির্বাচিত মহিলা কাউন্সিলর নাজমা সুলতানাকে উপজেলা কমিটির মহিলাবিষয়ক সম্পাদক করা হয়েছে। এসব ঘটনায় ত্যাগী নেতারা তাদের দীর্ঘদিনের অবদানের কথা জানিয়ে প্রতিবাদ করছেন।
এই বিতর্কিত কমিটি অনুমোদনের প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কমিটি অনুমোদনের স্বাক্ষরের স্থানে রহস্যজনকভাবে ‘নির্দেশিত হয়ে এই কমিটি অনুমোদন করা হইল’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এই ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্যটি অনুপ্রবেশের নির্দেশ কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব থেকে এসেছিল কিনা, সেই প্রশ্ন সামনে এনেছে।
কমিটি ঘোষণার পর থেকে নির্যাতিত ও পদবঞ্চিত নেতারা তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করে লাগাতার বিক্ষোভ করছেন। এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এ কে কিবরিয়া স্বপন জানান, কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে ফরোয়ার্ড করে কমিটি জমা দেওয়া হয়েছিল, তাই যাচাই-বাছাইয়ের সুযোগ কম ছিল। তবে তিনি দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন: "যদি এমন কোনো দালিলিক প্রমাণ থাকে—কমিটিতে এমন কেউ স্থান পেয়েছে, যারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত, আমরা তাৎক্ষণিকভাবে তাকে দল থেকে অব্যহতি দেব।
