ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ততই পটুয়াখালী -২ (বাউফল) আসনের রাজনৈতিক মেরুকরণ স্পষ্ট হচ্ছে। এই আসনে বিএনপি একদিকে যেমন তাদের দলীয় মনোনয়ন নিয়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ভুগছে, তেমনি জোটের শরিকদের কাছ থেকে আসন ভাগাভাগির চাপেও রয়েছে। ইসলামী আন্দোলন সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোও প্রচার-শোডাউনে পিছিয়ে নেই।
বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা দলীয় মনোনয়ন নিয়ে মহা টেনশনে আছেন। এই আসনে কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ দফতর সম্পাদক মুনির হোসেন, সাবেক এমপি শহিদুল আলম তালুকদার, ইঞ্জিনিয়ার ফারুক আহমেদ তালুকদার, প্রকৌশলী শোয়েব বাশরী হাবলু, কৃষকদল নেতা একেএম মিজানুর রহমান লিটু ও আনিসুর রহমান আনিস—এই ছয়জনই দলীয় মনোনয়ন চাইছেন। মনোনয়ন নিশ্চিত না হওয়ায় তৃণমূলের চায়ের দোকান আর হাট-বাজারে প্রার্থীদের নিয়ে তুমুল বিতর্ক ও বিভাজন তৈরি হয়েছে।
উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক সামুয়েল আহমেদ লেলিন জানিয়েছেন, মনোনয়ন প্রত্যাশীদের আচার আচরণের কারণে তৃণমূলে বিভাজন তৈরি হয়েছে, যা মনোনয়ন নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত বহাল থাকবে। তিনি দলীয় ঐক্যের জন্য প্রার্থীর উদার মানসিকতার ওপর জোর দিয়েছেন। তবে, বিএনপির ত্যাগী নেতারা স্পষ্ট জানিয়েছেন, দলে ঐক্য ফেরাতে হলে আসন্ন নির্বাচনে ক্লিন ইমেজের নেতাকেই মনোনয়ন দিতে হবে, কারণ ভোটাররা 'ত্রাস সৃষ্টিকারি গুন্ডা টাইপের প্রার্থীকে' গ্রহণ করবে না।
এদিকে, জামায়াতে ইসলামীর প্রস্তুতি এই আসনে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতা ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের কর্মীরা প্রতিদিন ঘরে ঘরে গিয়ে তাদের দাড়িপাল্লার পক্ষে ভোট চাইছেন। উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যাপক খালিদুর রহমান নিশ্চিত করেছেন যে, তাদের নির্বাচনী প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে এবং কেন্দ্র ও বুথ ভিত্তিক কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিনি দাবি করেন, তাদের প্রার্থীর পক্ষে গণজোয়ার তৈরি হয়েছে।
অন্যদিকে, এনসিপি (জাতীয় নাগরিক পার্টি) এই আসনটি বিএনপির কাছ থেকে জোটের ছাড়ের মাধ্যমে নিতে চাইছে। এনসিপির সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থী হলেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতা মুজাহিদুল ইসলাম শাহিন। তিনি বাউফল উপজেলা জামায়াতের আমিরের পুত্র হওয়ায় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জোটের সিদ্ধান্তে ছাড় পেলে এই আসনটি জামায়াতের জন্য সুনিশ্চিত হবে। এনসিপি নেতা মুজাহিদুল ইসলাম শাহিন আশাবাদী যে বিএনপি আসনটি ছাড় দিলে তা গণমানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করবে এবং জয়লাভের পর আধুনিক বাউফল গড়ে তোলা হবে।
সমগ্র বাউফল আসনে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও জোটের শরিকদের পক্ষ থেকে আসন দখলের চাপ নির্বাচনের ফলাফলকে কোন দিকে নিয়ে যায়, সেদিকেই এখন নজর রাখছে রাজনৈতিক মহল।
