আফগানিস্তানের সঙ্গে চলমান দীর্ঘদিনের সীমান্ত সংঘাত এবং সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে স্থায়ী সমাধান খোঁজার প্রচেষ্টা ভেস্তে গেছে। তুরস্কের ইস্তাম্বুলে দুই দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে অনুষ্ঠিত উচ্চপর্যায়ের বৈঠক বুধবার (২৯ অক্টোবর) ব্যর্থ হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে পাকিস্তান। আলোচনার এই অচলাবস্থার জন্য ইসলামাবাদ সরাসরি কাবুলকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে এবং আফগান সরকার পাকিস্তান বিরোধী সন্ত্রাসীদের অবিরাম সমর্থন দিচ্ছে বলে গুরুতর অভিযোগ তুলেছে।
পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তাতার এক্সে দেওয়া এক পোস্টে লিখেছেন, "দুঃখজনকভাবে, আফগানরা কোনো নিশ্চয়তা দেয়নি। তারা মূল বিষয় থেকে সরে গিয়ে দোষ চাপানোর খেলা পুনরায় চালু করেছে।" তিনি স্পষ্ট করেন যে, পাকিস্তান আলোচনার টেবিলে খোলা মনে বসলেও, আফগানরা পাকিস্তান বিরোধী সন্ত্রাসীদের ক্রমাগত সমর্থন দিয়ে আলোচনার পরিবেশ নষ্ট করেছে। এই ব্যর্থতার কারণে নিজ নাগরিকদের সুরক্ষায় ইসলামাবাদকে 'প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা' নিতে হবে বলেও তাতার হুমকি দেন।
এই শান্তি আলোচনা শুরুর প্রেক্ষাপট ছিল রক্তক্ষয়ী সীমান্ত সংঘর্ষ। গত ৯ অক্টোবর কাবুলে পাকিস্তান বিমান হামলা চালালে জবাবে আফগান সেনারা সীমান্তে পাক সেনাদের ওপর তীব্র হামলা শুরু করে। টানা কয়েকদিনের এই সংঘর্ষে প্রায় ৭০ জন নিহত ও কয়েকশ মানুষ আহত হন। কাতার ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় সংঘাত থামলেও, দীর্ঘস্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করতে এই আলোচনা শুরু হয়েছিল।
পাকিস্তানের মূল অভিযোগ হলো, ২ হাজার ৬০০ কিলোমিটার দীর্ঘ আফগান ভূখণ্ডে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি) তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং তালেবান সরকার তাদের মদদ দিয়ে থাকে। আফগানিস্তান যদিও শুরু থেকেই এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে, তবে আলোচনা ব্যর্থ হওয়ায় পাকিস্তানের অভিযোগ আরও জোরালো হলো।
এই কূটনৈতিক অচলাবস্থা দুই প্রতিবেশী দেশের সম্পর্ককে আরও অবনতির দিকে নিয়ে গেল। পাকিস্তানের এই কঠোর অভিযোগ এবং ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকির ফলে সীমান্তে নতুন করে সামরিক উত্তেজনা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। এই স্পর্শকাতর বিষয়ে আফগানিস্তান এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এই অঞ্চলে শান্তি ফেরাতে তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা ছাড়া স্থায়ী সমাধান কঠিন।
