ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার কর্তৃক জারি করা জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আমূল পরিবর্তন এনেছে, যা প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর ভিন্নমতকে অনেকাংশে পাশ কাটিয়ে গেছে। বিশেষ করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি), মহাহিসাব নিরীক্ষক এবং ন্যায়পাল নিয়োগের মতো সংবেদনশীল বিষয়গুলোতে বিএনপির 'নোট অব ডিসেন্ট' বা ভিন্নমত আংশিক পূরণ হলেও মূল বিষয়গুলো আমলে নেওয়া হয়নি।
বিএনপি চেয়েছিল দুদকে নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকার আইন প্রণয়ন করে ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশে সেই দাবি উপেক্ষা করে একটি নতুন বাছাই ও পর্যালোচনা কমিটির মাধ্যমে নিয়োগের বিধান রাখা হয়েছে। গণভোটে 'হ্যাঁ' জয়ী হলে এই কমিটিই নিয়োগের জন্য নাম প্রস্তাব করবে এবং রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেবেন। এই কমিটিতে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতি (প্রধান বিচারপতি ব্যতীত) নেতৃত্ব দেবেন এবং হাইকোর্ট বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতি, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, পিএসসির চেয়ারম্যানসহ সরকারি ও বিরোধীদলীয় প্রতিনিধি এবং প্রধান বিচারপতির মনোনীত নাগরিক প্রতিনিধিরা সদস্য থাকবেন। এর মধ্য দিয়ে সাংবিধানিক নিয়োগগুলোতে রাজনৈতিক প্রভাব কমানোর একটি চেষ্টা লক্ষ্যণীয়।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন নিয়ে বিএনপির কোনো ভিন্নমত না থাকলেও, এর গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে তাদের যে ভিন্নমত ছিল, তা সরকার আমলে নেয়নি। একইসঙ্গে এনসিপি জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি চেয়েছিল, যা আংশিকভাবে পূরণ হয়েছে। অন্যদিকে, এনসিপি এবং জামায়াতের সংসদকে দ্বৈত ভূমিকা (সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে কাজ করার ক্ষমতা) দেওয়ার পক্ষে ছিল, যা সনদ বাস্তবায়ন আদেশে রাখা হয়েছে। যদিও বিএনপি সংসদের এই ক্ষমতা প্রদানের ঘোর বিরোধী ছিল।
এই আদেশের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়ায় ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার 'ইনোভেটিভ আইডিয়া'কে প্রাধান্য দিলেন। এতে একদিকে যেমন বিএনপির সাংবিধানিক কাঠামো নিয়ে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ভিন্নমত আমলে নেওয়া হলো না, তেমনি অন্যদিকে এনসিপি-এর রাষ্ট্রপতি সংক্রান্ত আপত্তিকে উপেক্ষা করে রাষ্ট্রপতির নামেই আদেশ জারি করা হলো।
