আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলেও, বাংলাদেশের বিচারিক প্রক্রিয়ায় এই রায়টি চূড়ান্ত নয়। দ্য ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনালস) অ্যাক্ট, ১৯৭৩ অনুযায়ী, এই রায়ের বিরুদ্ধে দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির জন্য আপিল বিভাগে আপিল করার সুযোগ রয়েছে। পাশাপাশি, খালাসের আদেশ বা দণ্ডের বিরুদ্ধে সরকার কিংবা অভিযোগকারীরও আপিল করার অধিকার রয়েছে।
তবে, আপিলের এই প্রক্রিয়াটি চালু করতে হলে দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে রায়ের ৩০ দিনের মধ্যে আবেদন করতে হবে এবং আপিল দায়েরের ৬০ দিনের মধ্যে তা নিষ্পত্তির বিধান আইনে রয়েছে। আপিল বিভাগে দণ্ডিত ব্যক্তির আইনজীবী বিচার প্রক্রিয়ার অসঙ্গতি তুলে ধরে নিজের মক্কেলকে নির্দোষ প্রমাণের সুযোগ পান। আপিল বিভাগ এই রায়কে বহাল, পরিবর্তন বা বাতিল করতে পারে।
সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পর বিচারিক প্রক্রিয়ার সর্বশেষ ধাপ হলো রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন করা। আপিল বিভাগেই এই আবেদন করা হয়, যেখানে আপিলের রায়ের আইনি ত্রুটি-বিচ্যুতি তুলে ধরা হয়। এই রিভিউ আবেদন শুনানিই মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার বিচারিক প্রক্রিয়ার শেষ ধাপ হিসেবে বিবেচিত। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আপিলের পর রিভিউ আবেদন করে খালাস পাওয়ার নজিরও রয়েছে, যেমন জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালের মৃত্যুদণ্ডের রায় আপিলে বহাল থাকা সত্ত্বেও পুনর্বিবেচনার মাধ্যমে খালাস পেয়েছিলেন।
বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরও দণ্ডপ্রাপ্তের জীবন রক্ষার জন্য আরেকটি সুযোগ থাকে, যা হলো রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা। সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, আপিল ও রিভিউ আবেদনেও মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকলে, দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি রাষ্ট্রপতির কাছে সাজা মওকুফ, হ্রাস বা স্থগিতের জন্য আবেদন করতে পারেন।
এছাড়া, ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দেওয়ায় প্রসিকিউটর জানিয়েছেন যে সরকার বিভিন্ন সংস্থা যেমন এনবিআর বা অন্য কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে এই নির্দেশ বাস্তবায়ন করে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ক্ষতিপূরণের অর্থ বন্টনের সিদ্ধান্ত নিবে।
