সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে হত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ডাদেশ দেওয়ার পর শহীদ পরিবারগুলোর মধ্যে একযোগে সন্তুষ্টি ও শঙ্কা বিরাজ করছে। এই রায়কে ন্যায়বিচারের প্রাথমিক বিজয় হিসেবে দেখলেও, পরিবারগুলো রায় কার্যকর হওয়া নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের একটাই দাবি—ভারতে পালিয়ে থাকা দণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে এনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলেই রায় কার্যকর করতে হবে।
কমলনগরের শহীদ মাজহারুল ইসলাম মাসরুরের স্ত্রী সালমা বেগম ও বাবা আব্দুল খালেক রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানান। আব্দুল খালেক বলেন, "ফাঁসি কার্যকর দেখে যেতে পারলে মরেও শান্তি পাব।" একই সুর শোনা যায় শহীদ পরিবারের বহু সদস্যের কণ্ঠে। গাইবান্ধার শহীদ সাজ্জাদ হোসেন সজলের মা শাহিনা শেখ হাসিনার ফাঁসির রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানিয়ে বলেন, "আমরা ন্যায়বিচার পেয়েছি, এখন তা কার্যকর দেখতে চাই।"
শহীদ সাংবাদিক এটিএম তুরাবের ভাই আবুল আজরফ আহসান জাবুর দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ই শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের ফাঁসি কার্যকর হওয়া দরকার। তিনি মনে করেন, রায় কার্যকর না হলে তার ভাইয়ের আত্মা শান্তি পাবে না।
রায় কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত পরিবারগুলোর শঙ্কা কাটছে না। কুমিল্লার দেবিদ্বারে শহীদ আবদুর রাজ্জাক রুবেলের স্ত্রী হ্যাপী আক্তার বলেন, "স্বৈরাচার শেখ হাসিনার ফাঁসির রায় কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত জুলাই শহীদ পরিবারের কেউ খুশি হতে পারছি না। দ্রুত হাসিনাসহ তার দোসরদের বাংলাদেশে এনে ফাঁসি কার্যকর করতে হবে।" সিরাজগঞ্জের শহীদ হাফেজ সিয়ামের বাবা আব্দুল কুদ্দুসসহ অন্যান্য শহীদ পরিবারের সদস্যরাও একই দাবি জানিয়েছেন।
রাজধানী থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলের শহীদ পরিবারের সদস্যরা—যেমন দিনাজপুর, পটুয়াখালী, সুনামগঞ্জ, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, নাটোর, জয়পুরহাট, ভোলা, নারায়ণগঞ্জ, রাজবাড়ী, বরিশাল এবং বগুড়ার অভিভাবকরা—একই কণ্ঠে সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। তাদের সবার মূল দাবি একটাই—ভারত থেকে শেখ হাসিনাকে দেশে এনে রায় কার্যকর করা এবং আর যেন কোনো বাবা-মায়ের বুক খালি না হয়, তার নিশ্চয়তা প্রদান করা।
