রাজনীতি

নির্বাচনের আগে ‘হাসিনা ফ্যাক্টর’: কতটা চ্যালেঞ্জের মুখে ঢাকা-দিল্লি সমীকরণ?

নির্বাচনের আগে ‘হাসিনা ফ্যাক্টর’: কতটা চ্যালেঞ্জের মুখে ঢাকা-দিল্লি সমীকরণ?

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দুই ভিআইপি ব্যক্তিত্বের মৃত্যুদণ্ডাদেশকে ঘিরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যেকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে এক নতুন মাত্রার জটিলতা তৈরি হয়েছে। এই রায় এমন এক সময়ে এলো, যখন বাংলাদেশ সরকার মাত্র মাস তিনেকের মধ্যে একটি জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, নির্বাচনের পর নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই 'শেখ হাসিনা ইস্যু' দুই দেশের সম্পর্ককে স্বাভাবিক করার পথে বড় ধরনের বাধা হিসেবে কাজ করতে পারে।

প্রসঙ্গত, গত ১৭ নভেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধের এক মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে। যেহেতু দণ্ডপ্রাপ্ত এই দুই নেতা বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন, তাই বাংলাদেশ সরকার রায় ঘোষণার পরই তাদের প্রত্যর্পণের জন্য দিল্লিকে আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানিয়েছে।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এই মুহূর্তে মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার এবং ভারতের মধ্যে সম্পর্ক বেশ শীতল। এই পরিস্থিতিতে, প্রত্যর্পণ ইস্যুতে ইউনূস সরকারের অনুরোধে ভারতের দ্রুত সাড়া দেওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। ভারতের কূটনৈতিক মনোভাবে এই বিষয়টি স্পষ্ট যে তারা বাংলাদেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আগামী নির্বাচনের ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করছে।

দিল্লি এবং ঢাকার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের গতিপথ মূলত নির্ভর করবে নির্বাচনের পর বাংলাদেশের নতুন সরকারের প্রকৃতি ও দৃষ্টিভঙ্গির ওপর। নতুন সরকারের পররাষ্ট্রনীতি কেমন হবে, বিশেষ করে ভারতের প্রতি তাদের মনোভাব কেমন থাকে—এগুলোই হবে সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের মূল ভিত্তি। এর পাশাপাশি, ভারত সরকারও এই নতুন সরকারের সাথে কী ধরনের সম্পর্ক স্থাপন করতে আগ্রহী হবে, তা-ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াবে।

সামগ্রিকভাবে, 'শেখ হাসিনা ইস্যু' বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য ভারতকে চাপ দেওয়ার একটি কূটনৈতিক সুযোগ তৈরি করলেও, সম্পর্কের তাৎক্ষণিক কোনো উন্নতি ঘটার ইঙ্গিত নেই। তবে দীর্ঘমেয়াদে, নির্বাচনের পর স্থিতিশীলতা ফিরে এলে এবং দুই দেশের স্বার্থে অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হলে, তবেই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার দিকে এগোতে পারে।