রাজনীতি

নারী সুরক্ষায় ৫ অগ্রাধিকার: জন্মদিনে তারেক রহমানের 'নিরাপদ ডিজিটাল বাংলাদেশ' গড়ার প্রতিশ্রুতি

নারী সুরক্ষায় ৫ অগ্রাধিকার: জন্মদিনে তারেক রহমানের 'নিরাপদ ডিজিটাল বাংলাদেশ' গড়ার প্রতিশ্রুতি

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তার জন্মদিনে দেশের নারী সমাজের জন্য অনলাইন ও অফলাইন নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পাঁচটি জরুরি অগ্রাধিকারমূলক পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছেন। ডিজিটাল বিশ্ব যে গতিতে জীবনযাত্রা পরিবর্তন করছে, তাতে দেশের অসংখ্য নাগরিকের মতো তিনিও তার মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে একই সঙ্গে আশাবাদী ও উদ্বিগ্ন বলে জানান। তার মতে, বাংলাদেশ সামনে এগোতে চাইলে দেশের নারী সমাজকে অবশ্যই হয়রানি, হুমকি বা সহিংসতার ভয় নিয়ে বাঁচা চলবে না।

বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক দীর্ঘ পোস্টে তারেক রহমান এই গভীর উদ্বেগের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, দৈনন্দিন জীবন থেকে রাষ্ট্রগুলোর পারস্পরিক সম্পর্ক পর্যন্ত প্রযুক্তির কারণে সব কিছুই বদলে গেছে। কিন্তু এই প্রযুক্তিনির্ভর যুগেও দেশের অসংখ্য নারী কেবল কথা বলার জন্য, কাজ করার জন্য বা স্বাধীনভাবে বাঁচার চেষ্টা করার জন্য হয়রানি ও সহিংসতার শিকার হন। এটি সেই কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ নয়।

এই প্রেক্ষাপটে, নারীদের নিরাপদ অনুভব নিশ্চিত করতে এবং তাদের ক্ষমতায়নে বিএনপি যে পাঁচটি মূল অগ্রাধিকার বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করছে, সেগুলোর বিস্তারিত রূপরেখা তিনি তুলে ধরেন।

প্রথমত, ‘জাতীয় অনলাইন সেফটি সিস্টেম’ চালুর ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে সাইবার বুলিং, আইডি চুরি বা তথ্য ফাঁসসহ যেকোনো অনলাইন নির্যাতনের দ্রুত রিপোর্ট করার জন্য ২৪/৭ হটলাইন এবং একটি সহজ অনলাইন পোর্টাল থাকবে। প্রশিক্ষিত রেসপন্স টিম এই অভিযোগগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করবে। একই সঙ্গে, আপত্তিকর কনটেন্ট দ্রুত সরিয়ে ফেলতে বড় প্রযুক্তি প্ল্যাটফর্মগুলোর সঙ্গে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে বাংলা ভাষার কনটেন্ট মডারেশন শক্তিশালী করার উপর জোর দেওয়া হয়েছে।

দ্বিতীয়ত, জনজীবনে সক্রিয় নারীদের জন্য ‘সুরক্ষা প্রোটোকল’ তৈরির কথা বলা হয়েছে। সাংবাদিক, অ্যাকটিভিস্ট বা নারী নেতারা অনলাইন বা অফলাইনে আক্রমণের শিকার হলে দ্রুত আইনি, ডিজিটাল এবং গোপনীয় সহায়তা নিশ্চিত করার জন্য জাতীয় গাইডলাইন তৈরি করা হবে। এর মূল লক্ষ্য, জনজীবনে অংশগ্রহণের জন্য কোনো নারীকে যেন নীরবতা অবলম্বন করতে না হয়।

পরিকল্পনায় আরও রয়েছে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা শিক্ষা’। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ওরিয়েন্টেশনের সময়ই বাস্তবমুখী ডিজিটাল নিরাপত্তা শেখানো হবে। প্রশিক্ষিত শিক্ষকরা ‘সেফটি ফোকাল পয়েন্ট’ হিসেবে কাজ করবেন, যা তরুণদের ডিজিটাল জগৎ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ব্যবহার করতে সহায়তা করবে।

চতুর্থ অগ্রাধিকারটি হলো ‘সহিংসতা ও হয়রানির বিরুদ্ধে কমিউনিটি পর্যায়ে শক্ত প্রতিক্রিয়া’ নিশ্চিত করা। এর আওতায় কমিউনিটি হেল্পডেস্ক, নিরাপদ যাতায়াত ব্যবস্থা, এবং উন্নত স্ট্রিট লাইটিংয়ের মাধ্যমে নারীদের দৈনন্দিন জীবনকে আরও নিরাপদ করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সবশেষে, ‘নেতৃত্বে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধির জাতীয় উদ্যোগ’ গ্রহণের কথা ঘোষণা করা হয়। নারীদের জন্য নেতৃত্ব প্রশিক্ষণ, পরামর্শদাতা নেটওয়ার্ক এবং কর্মক্ষেত্রে শিশু যত্ন সুবিধা বাড়ানোর মতো কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। তারেক রহমান দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, নারীরা যখন এগিয়ে যায়, দেশও তখন অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলে।

ফলাফল ও গুরুত্ব: তারেক রহমান বলেন, রাজনীতি, ধর্ম, জাতি বা লিঙ্গ নির্বিশেষে একটি বিষয় আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ করে – আর তা হলো নারীরা যখন নিরাপদ ও ক্ষমতায়িত থাকে, তখনই বাংলাদেশ অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে। এই ঘোষণার মাধ্যমে তিনি আগামী প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ ও সমর্থিত ভবিষ্যৎ গড়ার আহ্বান জানান।