অন্যান্য

এনবিআর-মৎস্য বিভাগের সমন্বয়হীনতার বলি মাছ রপ্তানি: ঝুঁকিতে রেমিট্যান্স প্রবাহ

এনবিআর-মৎস্য বিভাগের সমন্বয়হীনতার বলি মাছ রপ্তানি: ঝুঁকিতে রেমিট্যান্স প্রবাহ

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং মৎস্য অধিদপ্তরের মধ্যে সঠিক সমন্বয়ের অভাবে দেশের অন্যতম বৃহৎ রপ্তানিমুখী আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে মাছ রপ্তানি কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। গত ১৩ নভেম্বর এনবিআর মৎস্য রপ্তানির সনদ প্রক্রিয়াকে অনলাইনে স্থানান্তরের নির্দেশ দিলেও মৎস্য অধিদপ্তর সেই বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়নি, যার ফলস্বরূপ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই বন্দরের মাছ রপ্তানি কার্যক্রম।

ব্যবসায়ীরা জানান, এই বন্দর দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৫০ থেকে ৭০ টন দেশীয় মাছ (যেমন রুই, কাতল, পাঙ্গাশ) উত্তরপূর্ব ভারতে রপ্তানি হয়। যার দৈনিক আর্থিক মূল্য প্রায় দেড় কোটি টাকার কাছাকাছি। এই রপ্তানি বন্ধ হওয়ায় শুধু ব্যবসায়িক ক্ষতিই নয়, দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনও বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।

আখাউড়া স্থলবন্দরের মাছ রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফারুক মিয়া পুরো পরিস্থিতিকে প্রশাসনের ‘সমন্বয়হীনতার’ ফল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তিনি বলেন, একটি উচ্চ-পর্যায়ের নির্দেশ জারির পর সংশ্লিষ্ট বিভাগ তার বাস্তবায়নে যদি চরম গাফিলতি দেখায়, তবে তার মাশুল সাধারণ ব্যবসায়ীদের ওপর চাপানো হচ্ছে। এই স্থবিরতা যত দিন চলবে, তত দিন দেশ সরকার রেমিট্যান্স আয় থেকে বঞ্চিত হবে।

অন্যদিকে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জাকির হোসেনের বক্তব্য সরকারি দপ্তরের সমন্বয়হীনতার বিষয়টিকেই আরও প্রকট করে তুলেছে। তিনি স্বীকার করেছেন যে এনবিআরের নির্দেশনার বিষয়টি তাদের আগে জানা ছিল না। এই বিলম্বিত জ্ঞান ও পদক্ষেপের কারণেই আজ রপ্তানি কার্যত স্তব্ধ। তিনি দ্রুত মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিলেও, ততক্ষণে বন্দরে কোটি কোটি টাকার মাছ আটকে পড়েছে এবং ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে।

এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে, কেন একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় রাজস্ব সংক্রান্ত নির্দেশনা মৎস্য বিভাগের মতো একটি সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাছে সময়মতো পৌঁছাল না? এই প্রশাসনিক দুর্বলতা দ্রুত কাটিয়ে ওঠা না গেলে শুধু মাছ রপ্তানি নয়, দেশের অন্যান্য রপ্তানি বাণিজ্যেও এমন স্থবিরতা নেমে আসতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন।