রাসুল (সা.)-এর নাম 'মুহাম্মাদ' রাখা হয়েছিল এক বিশেষ আধ্যাত্মিক ও ভবিষ্যদ্বাণীর প্রেক্ষাপটে, যা শুধু কুরাইশ বংশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। এই নামটি ছিল বিশ্বজুড়ে বহু প্রতীক্ষিত, কারণ এর উল্লেখ ছিল পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবসমূহে। নামের আভিধানিক অর্থ 'অধিক প্রশংসিত' যেমন তার নবুয়তের শ্রেষ্ঠত্বের পরিচয় বহন করে, তেমনি ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় গ্রন্থগুলোও এর গভীর তাৎপর্যকে সমর্থন করে।
আব্দুল মুত্তালিব যখন সপ্তম দিনে প্রিয় নাতির নাম 'মুহাম্মাদ' রাখেন, তখন তিনি বিস্ময় প্রকাশ করা কুরাইশদের সামনে এই নামের মহৎ উদ্দেশ্য তুলে ধরেন: তিনি চেয়েছিলেন তার নাতি আসমান ও জমিনে প্রশংসিত হোন। এই ঐকান্তিক আগ্রহ কেবল দাদার স্নেহ ছিল না, বরং তার স্বপ্নে প্রাপ্ত ইঙ্গিত এবং নবীজির (সা.) জন্ম মুহূর্তে আমেনা (রা.) কর্তৃক দৃষ্ট অলৌকিক আলোর প্রেক্ষাপটে নেওয়া একটি সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত। আমেনা (রা.) যখন শামের প্রাসাদ আলোকিত হওয়া দেখেন, তখন আব্দুল মুত্তালিব বুঝতে পারেন, এই শিশুই সেই প্রতীক্ষিত শেষ নবী, যিনি বিশ্বব্যাপী খ্যাতি লাভ করবেন।
এই নামকরণের পেছনে সবচেয়ে বড় প্রমাণ হলো পূর্ববর্তী ধর্মগ্রন্থসমূহের জ্ঞান। প্রখ্যাত ইসলামিক স্কলার ইমাম ইবনু তাইমিয়া (রহ.) তার 'আল-জাওয়াব আস-সাহিহ' গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, তিনি যাবুর কিতাবের বিভিন্ন নুসখায় শেষ নবীর আগমনের সুসংবাদ ও তার নামের উল্লেখ দেখেছেন। এই তথ্য প্রমাণ করে যে, নবীজির (সা.) আগমন ও তার নামটি আল্লাহর পক্ষ থেকে সুপ্রাচীনকাল থেকেই নির্ধারিত ছিল।
এর ফলস্বরূপ, সিরাত ইবনে হিশামের টীকা অনুযায়ী জানা যায় যে, আসমানী কিতাব সম্পর্কে অবগত বেশ কয়েকজন পণ্ডিত ব্যক্তি এই আশায় তাদের সন্তানদের নাম 'মুহাম্মাদ' রেখেছিলেন। তাদের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে, তাদের সন্তানই হয়তো সেই প্রতীক্ষিত শেষ নবী হতে পারে, যা প্রমাণ করে যে 'মুহাম্মাদ' নামটি ধর্মীয় সমাজে বহু আগে থেকেই একটি পবিত্র ও প্রতীক্ষিত নাম ছিল।
সুতরাং, আব্দুল মুত্তালিবের নামকরণটি কোনো আকস্মিক ঘটনা ছিল না, বরং এটি ছিল হাজার বছরের পুরনো এক ভবিষ্যদ্বাণীর বাস্তব প্রতিফলন। এই নামের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা তার হাবিবের শ্রেষ্ঠত্ব, মহত্ত্ব এবং সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতার পথকে সুগম করে দিয়েছিলেন।
