ধুনট (বগুড়া): শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কখনোই সাফল্যের পথে বাধা হতে পারে না, সেই কথাই যেন প্রমাণ করলেন বগুড়ার ধুনট উপজেলার নাইস খাতুন হাসি (২৪)। জন্ম থেকেই দুটি পা এবং একটি হাত অকেজো হওয়া সত্ত্বেও, শুধুমাত্র বাম হাতের ভরসায় তিনি অনার্স ফাইনাল পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়ে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। সম্প্রতি প্রকাশিত ফলাফলে তিনি সিজিপিএ ৩.০২ অর্জন করেছেন।
বিশ্ব হরিগাছা গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম ও গৃহিণী আকতার জাহানের মেয়ে হাসি। দরিদ্র পরিবারে বেড়ে ওঠা হাসি ছোটবেলা থেকেই জানতেন যে, শারীরিক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও তাকে সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হবে। ভিক্ষাবৃত্তি বা পরিবারের বোঝা না হয়ে, তিনি বেছে নেন শিক্ষার কঠিন পথ। তার এই অদম্য যাত্রাপথে একমাত্র অবলম্বন ছিলেন তার বাবা নজরুল ইসলাম, যিনি টানা ১৮ বছর ধরে হাসিকে কোলে করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়ে গেছেন।
হাসির শিক্ষাজীবন শুরু হয় ছয় বছর বয়সে গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। পঞ্চম শ্রেণির গণ্ডি পেরিয়ে তিনি বিশ্ব হরিগাছা-বহালগাছা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৭ সালে মানবিক শাখায় এসএসসি পাস করেন (জিপিএ-৩.৫৫)। এরপর ২০১৯ সালে উচ্চ মাধ্যমিক (জিপিএ-২.৭৫) সম্পন্ন করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ধুনট সরকারি ডিগ্রি কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে অনার্সে ভর্তি হন। এই দীর্ঘ ১৮ বছরের পথচলায় বাবার নিঃস্বার্থ শ্রম ও ভালোবাসা ছিল তার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা।
হাসির বাবা নজরুল ইসলাম জানান, দূর থেকে হাসিকে স্বাভাবিক মনে হলেও তার শরীরের সিংহভাগই অচল। তবুও হাসির মুখে সব সময় হাসি লেগে থাকে। মেয়ের এই সাফল্যে তিনি গর্বিত এবং সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন।
অন্যদিকে, নাইস খাতুন হাসি দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, যখন বাবার কোলে চড়ে পথে বের হতেন, তখন মানুষ আড় চোখে তাকাতো। কিন্তু লেখাপড়ার প্রতি তার গভীর আগ্রহের কারণে সেই মানুষেরাই এখন তাকে ভালোবাসে ও সম্মান করে। তিনি কারো বোঝা হয়ে থাকতে চান না এবং ভবিষ্যতে একজন মহান শিক্ষক হয়ে সমাজ গড়ার কাজে নিজেকে নিয়োজিত করতে চান। তার এই ফল শুধুমাত্র একটি ডিগ্রি নয়, বরং শত প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করে জেতা এক বিজয়গাথা।
