আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে নতুন এক মডেলের জন্ম দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন যে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যেকার সাম্প্রতিক সংঘাত নিরসনে তিনি 'শুল্কের হুমকি' নামক এক অপ্রচলিত পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন। ওয়াশিংটনের ইউএস-সৌদি ইনভেস্টমেন্ট ফোরামে দেওয়া বক্তব্যে তিনি দৃঢ়তার সাথে ঘোষণা করেন যে, দুই দেশের ওপর ৩৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুঁশিয়ারি দেওয়ার পরই তারা যুদ্ধ থামাতে সম্মত হয়। ট্রাম্পের এই মন্তব্য বিশ্বজুড়ে কূটনৈতিক মহলে তীব্র আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দাবি অনুযায়ী, যখন উত্তেজনা তুঙ্গে, তখন প্রথাগত আলোচনার মাধ্যমে কোনো ফল আসছিল না। দুই পক্ষই নিজেদের অবস্থানে অনড় ছিল। সেই মুহূর্তে তিনি সরাসরি দুই দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ওপর ভয়ংকর আঘাত হানার হুমকি দেন, যা তাদের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিতে পারত। ট্রাম্পের এই কৌশলকে অনেকে 'শুল্ক কূটনীতি' (Tariff Diplomacy) হিসেবে আখ্যা দিচ্ছেন, যেখানে সামরিক শক্তি বা জাতিসংঘ Resolución-এর চেয়েও দ্রুত কাজ করেছে অর্থনৈতিক ভয়ভীতি।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ট্রাম্পের এই দাবি কিছুটা অতিরঞ্জিত হলেও এর মধ্যে সত্যের উপাদান থাকতে পারে। ভারত ও পাকিস্তান, উভয় দেশই বৈশ্বিক বাণিজ্যের ওপর নির্ভরশীল এবং এমন বিশাল শুল্ক আরোপ হলে তা তাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করত। এই শুল্কের ভয়াবহতা উপলব্ধি করেই দুই দেশ দ্রুত সংঘাতের পথ থেকে সরে আসে—এমনটাই ইঙ্গিত দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তিনি মে মাসে দুই দেশের উত্তেজনা নিরসনে তাঁর ভূমিকার কথা বহুবার উল্লেখ করেছেন, যা এই বক্তব্যকে আরও সমর্থন যোগায়।
তবে, এই দাবির ফলে ট্রাম্পের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। একদিকে, তাঁকে একজন কার্যকর 'সমস্যা-সমাধানকারী' হিসেবে দেখা হচ্ছে; অন্যদিকে, তাঁর এই ধরনের 'চাপের রাজনীতি' আন্তর্জাতিক মিত্রদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়াতে পারে। শুল্ক আরোপের হুমকিকে যুদ্ধ থামানোর মূল কারণ হিসেবে তুলে ধরায় অন্যান্য আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা গৌণ হয়ে যাচ্ছে বলেও মনে করছেন অনেকে। সব মিলিয়ে, ট্রাম্পের এই 'অর্থনৈতিক হুমকি' তত্ত্ব আঞ্চলিক শান্তি স্থাপনের ধারণাকেই নতুন করে সংজ্ঞায়িত করেছে।
