মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগের সাম্প্রতিক ‘অপ গেমপুর’ অভিযানে আটক ১৭৪ জন বাংলাদেশি শ্রমিকের ঘটনাটি শুধুমাত্র অবৈধ অভিবাসনের বিষয় নয়, বরং এর নেপথ্যে থাকা কিছু জটিল অর্থনৈতিক ও সামাজিক কারণের দিকেও ইঙ্গিত করছে। ইমিগ্রেশন ডিরেক্টর-জেনারেল দাতুক জাকারিয়া শাহবান নিজেই স্বীকার করেছেন যে, পাহাড়ি এলাকা ও শহর থেকে দূরে এসব স্থানে বিদেশি কর্মীদের আসতে আগ্রহের একটি অন্যতম কারণ হলো—'কিছু স্থানীয় ব্যবসায়ীর বিদেশি কর্মী ব্যবহারের প্রবণতা'।
২০ নভেম্বর পরিচালিত এই বিশেষ অভিযানটি মূলত সেইসব নির্মাণস্থল, বাণিজ্যিক এলাকা ও সবজি খামারকে লক্ষ্য করে চালানো হয়, যেখানে দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয়দের অভিযোগ ছিল। এই অভিযোগগুলোই গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে সত্যতা পায় যে, একটি নির্দিষ্ট জেলা কৃষিকাজের জন্য বিদেশিদের একটি প্রধান কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। এই পরিস্থিতি মালয়েশিয়ার স্থানীয় শ্রম আইনে ফাঁক এবং কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর সস্তা শ্রমের প্রতি লোভকে তুলে ধরে।
বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত চলা এই অভিযানে ৫৪৭ জন কর্মী ও ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা অংশ নেন। তারা মোট ১ হাজার ৮৮৬ জন বিদেশির নথি যাচাই করেন। বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে যাদের আটক করা হয়েছে, তাদের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ পাস, প্রয়োজনীয় ভ্রমণ নথি না থাকা এবং বেশ কিছু ভুয়া কাজের অস্থায়ী ভিজিট পাস প্রদর্শন করার মতো গুরুতর অপরাধ রয়েছে।
আটককৃত ৪৬৮ জনের মধ্যে মিয়ানমারের ১৭৫ জন, বাংলাদেশের ১৭৪ জন এবং ইন্দোনেশিয়ার ৬৭ জনসহ মোট ১০টি দেশের নাগরিক রয়েছে। এটি স্পষ্ট করে যে, এশীয় দেশগুলোর শ্রমনির্ভর মানুষের কাছে মালয়েশিয়া এখনো একটি প্রধান গন্তব্য। এই বিপুল সংখ্যক আটকের ঘটনা বিদেশি শ্রমিকদের নিরাপত্তা, তাদের কাজের পরিবেশ এবং বৈধতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে মালয়েশীয় কর্তৃপক্ষের দায়বদ্ধতা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্ন তুলতে পারে। বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ৮৩ হাজারের বেশি বিদেশি আটক হওয়ার পরিসংখ্যান প্রমাণ করে যে, অবৈধ অভিবাসন রোধে মালয়েশিয়ার কঠোরতা ভবিষ্যতে আরও বাড়বে।
