আধুনিক বিজ্ঞান যেখানে ভূমিকম্পের কারণ হিসেবে ভূ-অভ্যন্তরের টেকটোনিক প্লেটের নড়াচড়াকে দায়ী করে, সেখানে ইসলাম ধর্ম এই বিপর্যয়কে সমাজের গভীর নৈতিক অবক্ষয় এবং মানুষের কৃতকর্মের সঙ্গে যুক্ত করে। প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর ভবিষ্যদ্বাণীতে এমন কিছু সামাজিক ও নৈতিক বিপর্যয়ের কথা উল্লেখ করেছেন, যা মানবজাতিকে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের দিকে ঠেলে দিতে পারে। বর্তমানে সমাজে ঘটে যাওয়া অসংখ্য ঘটনার সঙ্গে সেই হাদিসগুলোর তাৎপর্যপূর্ণ মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
তিরমিজি শরিফের একটি বিখ্যাত হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে যে, যখন সমাজে বেশ কিছু পাপকাজ ও অন্যায় ব্যাপকতা লাভ করবে, তখন মানুষ রক্তিম বর্ণের ঝড়, ভূকম্পন, ভূমিধস, লিঙ্গ পরিবর্তন, পাথর বৃষ্টি এবং সুতো ছেঁড়া দানার ন্যায় একের পর এক গজবের মুখোমুখি হবে। রাসুল (সা.) নির্দিষ্টভাবে যে বিষয়গুলো উল্লেখ করেছেন, তার মধ্যে রয়েছে—অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জন; আমানত রাখা সম্পদের আত্মসাৎ; জাকাতকে জরিমানা মনে করা; ধর্মীয় শিক্ষা ব্যতীত বিদ্যা অর্জন; বন্ধুকে প্রাধান্য দিয়ে বাবাকে দূরে সরিয়ে দেওয়া; স্ত্রীর বাধ্যগত হয়ে মায়ের সঙ্গে বিরূপ আচরণ; এবং সমাজে সবচেয়ে দুর্বল ও অযোগ্য ব্যক্তির শাসক হওয়া।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, উপর্যুক্ত প্রতিটি কারণ বর্তমানে আমাদের সমাজ বাস্তবতায় প্রকটভাবে দৃশ্যমান। অবৈধ অর্থ উপার্জন, বিশ্বাসভঙ্গ এবং পারিবারিক সম্পর্কের অবনতি এখন সাধারণ ঘটনা। এসব কর্মকাণ্ড সম্মিলিতভাবে একটি জাতির ওপর আল্লাহর অসন্তুষ্টি নিয়ে আসে, যার বহিঃপ্রকাশ ঘটতে পারে ভূমিকম্পের মতো আকস্মিক বিপর্যয়ের মাধ্যমে। এই হাদিসের আলোকে বলা যায়, ঘন ঘন ভূমিকম্পের ঘটনাগুলো কেবল একটি ভূতাত্ত্বিক প্রক্রিয়া নয়, বরং সমাজকে আল্লাহর পথে ফিরে আসার জন্য এক কঠিন reminder।
পবিত্র কোরআনে ভূমিকম্পের মহাপ্রলয়ঙ্করী রূপের বর্ণনা দিয়ে মানবজাতিকে সতর্ক করা হয়েছে। বিশেষ করে কিয়ামত দিবসে ভূকম্পনের যে ভয়াবহতা বর্ণিত হয়েছে—যেখানে স্তন্যপায়ী মা তার দুগ্ধপোষ্য সন্তানের কথা ভুলে যাবে এবং মানুষ মাতালের মতো দেখাবে—তা এই ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের গুরুত্বকে আরও বাড়িয়ে দেয়। তাই প্রতিটি ভূমিকম্প মূলত বান্দাদের জন্য আল্লাহর একটি চূড়ান্ত সতর্কবার্তা, যা পাপকাজ থেকে দ্রুত তাওবা করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসার আহ্বান জানায়।
