রাজনীতি

সন্ত্রাস-মাদকের আঁতুড়ঘর চট্টগ্রাম-১৫: জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে জনমত কোন দিকে?

সন্ত্রাস-মাদকের আঁতুড়ঘর চট্টগ্রাম-১৫: জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে জনমত কোন দিকে?

চট্টগ্রাম-১৫ আসন, যা লোহাগাড়া ও সাতকানিয়া আংশিক এলাকা নিয়ে গঠিত, তা দীর্ঘকাল ধরে স্থানীয়দের কাছে এক ধরনের সামাজিক অস্থিরতা ও অপরাধের কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। ভৌগোলিকভাবে কক্সবাজার জেলার সঙ্গে সীমান্ত থাকায় এই অঞ্চলে মরণঘাতী মাদক ইয়াবার অনুপ্রবেশ সহজ হয়ে উঠেছে, যা স্থানীয় যুব সমাজকে প্রভাবিত করে চলেছে। এর ফলস্বরূপ, কিশোর গ্যাং, চাঁদাবাজি এবং সন্ত্রাস এই এলাকার প্রধান সামাজিক উদ্বেগে পরিণত হয়েছে। আসন্ন নির্বাচনে যে দল বা প্রার্থীর পক্ষেই জনরায় যাক না কেন, এলাকাবাসীর সর্বসম্মত দাবি হলো এসব সমস্যার মূলোৎপাটন।

ঐতিহাসিকভাবেই আসনটি আওয়ামী লীগের জন্য বরাবরই চ্যালেঞ্জিং প্রমাণিত হয়েছে। ১৯৭৩ সালের পর শুধুমাত্র ২০১৪ সালে (যা একতরফা নির্বাচন ছিল) দলটি একবার জয়লাভ করেছিল। মূলত নব্বইয়ের পটপরিবর্তনের পর থেকে বেশিরভাগ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনেই এখানে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন, যা আসনটির একটি স্বতন্ত্র রাজনৈতিক চরিত্র নির্দেশ করে। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বর্তমানে গণ-অভ্যুত্থানের (২০২৪) পরবর্তী পরিস্থিতিতে নিষ্ক্রিয় থাকায় এলাকার রাজনৈতিক সমীকরণে জামায়াত আবার এগিয়ে এসেছে।

জামায়াতে ইসলামী একক প্রার্থী হিসেবে শাহাজাহান চৌধুরীকে ঘোষণা করে ফেব্রুয়ারি থেকেই মাঠে নেমেছেন। তিনি সন্ত্রাস, কিশোর গ্যাং ও মাদকমুক্ত সাতকানিয়া-লোহাগাড়া গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যা সরাসরি জনগণের প্রধান উদ্বেগের সঙ্গে মিলে যায়। লোহাগাড়ার বাসিন্দা শোয়াইবুল ইসলামের মতো সাধারণ ভোটারদের ভাষ্যমতে, "যে প্রার্থী এসব সমস্যার সমাধানে সুনির্দিষ্ট আশ্বাস দিতে পারবেন, তাকেই মানুষ জনপ্রতিনিধি হিসাবে নির্বাচিত করবে।"

অন্যদিকে, বিএনপির চারজন মনোনয়নপ্রত্যাশী থাকলেও জোটের কৌশলগত কারণে তারা এখনো অপেক্ষমাণ। এ আসনে বিএনপি-জামায়াত জোটবদ্ধভাবে দাঁড়ালে, ভোটের ফলাফল যেকোনো দিকে মোড় নিতে পারে। তবে, বর্তমান পরিস্থিতিতে জামায়াতের একক প্রার্থীর প্রতিশ্রুতিগুলো জনগণের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে। এলডিপি ও জাতীয় পার্টির মতো অন্য দলগুলোর তৎপরতা একেবারেই সীমিত। শেষ পর্যন্ত, চট্টগ্রাম-১৫ আসনের ভোটাররা সন্ত্রাস ও মাদক নির্মূলের প্রতিশ্রুতিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন বলে আশা করা যায়।