জাতীয়

ভূমিকম্পের সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে ১৭ জেলা

ভূমিকম্পের সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে ১৭ জেলা

বাংলাদেশে আঘাত হানতে পারে এমন শক্তিশালী ভূমিকম্পের ঝুঁকি বিবেচনায় আবহাওয়া অধিদপ্তর দেশের অঞ্চলসমূহকে তিনটি প্রধান জোনে বিভক্ত করেছে। এর মধ্যে 'জোন-১' বা সর্বোচ্চ ঝুঁকিপ্রবণ এলাকায় রয়েছে দেশের উত্তর-পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রায় ১৭টি জেলা। ফল্ট লাইন বা প্লেট বাউন্ডারির সন্নিকটে অবস্থান করায় এই অঞ্চলগুলো অত্যন্ত সংবেদনশীল হিসেবে চিহ্নিত। সাম্প্রতিক সময়ে দেশে অনুভূত হওয়া ভূকম্পনগুলো সেই ঝুঁকিকেই আরও একবার সামনে এনেছে।

প্রকাশিত মানচিত্র অনুযায়ী, সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ জোন-১-এর অন্তর্ভুক্ত জেলাগুলো হলো সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের নয়টি জেলা, ঢাকা বিভাগের কিশোরগঞ্জ এবং টাঙ্গাইল, গাজীপুর ও নরসিংদীর আংশিক এলাকা। এছাড়াও চট্টগ্রাম বিভাগের ব্রাহ্মণবাড়িয়া, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির বিস্তীর্ণ অঞ্চলকেও এই উচ্চঝুঁকির আওতাভুক্ত করা হয়েছে। অন্যদিকে, তুলনামূলকভাবে সর্বনিম্ন ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল জোন-৩-এর মধ্যে রয়েছে খুলনা, যশোর, বরিশাল এবং পটুয়াখালীসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের এই উচ্চঝুঁকিপ্রবণ অঞ্চলের পাশেই অবস্থান করছে ডাউকি ফল্ট, মধুপুর ফল্ট এবং তিনটি গুরুত্বপূর্ণ প্লেট বাউন্ডারি—যা মিয়ানমার থেকে নোয়াখালী, নোয়াখালী থেকে সিলেট এবং সিলেট থেকে ভারতের দিকে বিস্তৃত। অতীত পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১৯৭৬ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে রেকর্ড হওয়া পাঁচটি জোরালো কম্পনের উৎপত্তিস্থল ছিল সিলেট, মৌলভীবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবান এবং কক্সবাজার এলাকায়। এই তথ্য ভবিষ্যতের বড় ধরনের কম্পনের আশঙ্কাকে আরও জোরালো করেছে।

এই ভয়াবহ দুর্যোগ মোকাবিলায় পূর্বাভাস বা আগাম সতর্কতা প্রাপ্তির ওপর বৈশ্বিকভাবে সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করা হয়। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশগুলো ভূমিকম্পের পূর্বাভাস গবেষণায় বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করছে। যদিও ভূমিকম্প ঠেকানোর ক্ষমতা মানুষের নেই, তবে আগাম প্রস্তুতি ও সতর্কতা ক্ষয়ক্ষতি কমাতে অপরিহার্য। বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার জনগণকে সচেতন করা এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতি গ্রহণ করাই এখন মূল চ্যালেঞ্জ।