ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি হলো দ্রুত নিজেকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া। কিন্তু এই 'তাড়াহুড়ো' করতে গিয়েই বহু মানুষ এমন কিছু ভুল করে বসেন, যা জীবন বিপন্ন করে তোলে। শুক্রবারের ভূমিকম্পে আহত ও নিহত হওয়ার ঘটনাগুলো মনে করিয়ে দেয় যে, কোন পদক্ষেপগুলি কঠোরভাবে এড়িয়ে চলা উচিত। ভূমিকম্পের সময় কী করা উচিত, তা জানার পাশাপাশি, কী করা উচিত নয়—এই জ্ঞান থাকাটাও সমান জরুরি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বহুতল ভবন থেকে দ্রুত নিচে নামার জন্য লিফট ব্যবহার করা সবচেয়ে মারাত্মক ভুলগুলির মধ্যে অন্যতম। ভূমিকম্প চলাকালীন বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হতে পারে বা লিফট যেকোনো তলায় আটকে যেতে পারে। একইভাবে, জীবন বাঁচানোর জন্য ভবন থেকে লাফিয়ে পড়া বা তাড়াহুড়ো করে নামতে গিয়ে সিঁড়িতে ভিড় করাও অত্যন্ত বিপজ্জনক। এই পদক্ষেপগুলি আরও বেশি হতাহতের কারণ হতে পারে।
কম্পন চলাকালীন বারান্দা বা রেলিংয়ের কাছে অবস্থান করাও উচিত নয়। বারান্দার রেলিং বা অংশবিশেষ যেকোনো মুহূর্তে ধসে পড়তে পারে, যা আপনাকে বা নিচে থাকা অন্যদের আহত করতে পারে। গাড়িতে থাকা অবস্থায় দ্রুত গাড়ি থামিয়ে পদচারী-সেতু, উড়ালসড়ক, গাছ ও বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে দূরে অবস্থান নিন এবং কম্পন না থামা পর্যন্ত গাড়ির ভেতরেই থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
যদি কোনো দুর্ভাগ্যজনক কারণে আপনি ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েন, তবে অতিরিক্ত নড়াচড়া করা থেকে বিরত থাকুন। এতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বাড়ে। এ সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো মুখ ঢেকে রাখা, যাতে ধুলোবালি শ্বাসনালীতে প্রবেশ করতে না পারে। ধ্বংসস্তূপের নিচে আলোর জন্য মোবাইল টর্চ ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে গ্যাস লিকের আশঙ্কায় কখনোই ম্যাচ বা লাইটার জ্বালানো উচিত নয়। দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য চিৎকার না করে, পাইপে বা দেয়ালে বাড়ি দিয়ে সংকেত দেওয়ার চেষ্টা করুন।
ঘটনাটির সামগ্রিক গুরুত্ব বা ভবিষ্যৎ প্রভাব সম্পর্কে মন্তব্য: বারবার ভূকম্পনের প্রেক্ষিতে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং বিল্ডিং কোড কঠোরভাবে অনুসরণ করাই এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের ভয়াবহতা মোকাবিলার একমাত্র পথ।
