ভূমিকম্পের আকস্মিকতা মানুষের মনে তীব্র ভয় ও মানসিক অস্থিরতা সৃষ্টি করে। এই চরম অনিশ্চয়তার মুহূর্তে আল্লাহর জিকির, দোয়া এবং ক্ষমা প্রার্থনা (ইস্তিগফার) একজন মুমিনের জন্য কেবল আধ্যাত্মিক সুরক্ষা নয়, বরং এটি মানসিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা অর্জনের প্রধান মাধ্যম। ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করা হয় যে, জীবনের প্রতিটি বিপদই মহান সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে একটি পরীক্ষা বা সতর্কবার্তা। আর এই সতর্কবার্তা পেলে আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়াই ইমানদারের একমাত্র সঠিক পদক্ষেপ।
রাসুলুল্লাহ (সা.) সবসময় তাঁর অনুসারীদের বিপদের মুহূর্তে ধৈর্য ধারণ এবং আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা রাখার শিক্ষা দিয়েছেন। ভূমিকম্পের সময় পাঠ করার জন্য যে চারটি বিশেষ দোয়া শিক্ষা দেওয়া হয়েছে, তার প্রতিটিই মানুষের দুর্বলতা ও সৃষ্টিকর্তার মহত্ত্বের মাঝে একটি সেতুবন্ধন রচনা করে। এই দোয়াগুলো মূলত আত্মিক আত্মসমর্পণ এবং মানসিক শক্তি পুনরুদ্ধারের মন্ত্র হিসেবে কাজ করে।
এই সময় পাঠ করা প্রথম দোয়াটির একটি অংশ হলো—'ওয়া লা তুহলিকনা বিগাদাবিকা'—যার দ্বারা বান্দা আল্লাহর ক্রোধ থেকে রক্ষা চায়। এই প্রার্থনা মুমিনকে মনে করিয়ে দেয় যে, সৃষ্টিকর্তার ক্ষমতা কত বিশাল এবং তার কাছেই সবকিছুর সমাধান রয়েছে। এই আত্মবিশ্বাস উদ্বেগ কমায়।
দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ জিকিরটি, ‘হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি’মাল ওয়াকিল’—যা তাৎক্ষণিক ভয়ের মুহূর্তে মনকে স্থির করে দেয়। এই সংক্ষিপ্ত বাক্যটি উচ্চারণের মাধ্যমে মুমিন আল্লাহর ওপর সম্পূর্ণ ভরসা স্থাপন করে, ফলে মানসিক চাপ তাৎক্ষণিকভাবে লাঘব হয়। এটি যেন এক ঘোষণার মতো—যেখানে বলা হচ্ছে, আমার নিরাপত্তা ও তত্ত্বাবধানের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।
তৃতীয় দোয়া, ‘ইয়া হাইয়্যু ইয়া ক্বাইয়্যুমু, বিরাহমাতিকা নাস্তাগীস’ পাঠের মাধ্যমে মুমিন তাঁর সৃষ্টিকর্তাকে 'চিরঞ্জীব' ও 'পালনকর্তা' হিসেবে সম্বোধন করে। এটি চরম সংকটেও জীবনের স্থিতিশীলতার প্রতি আস্থা ফেরাতে সাহায্য করে। কারণ মুমিন জানে, যিনি সবকিছু ধারণ করে আছেন, তাঁর রহমত কখনোই শেষ হবে না।
ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর মুমিনদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ হলো তওবা বা অনুশোচনা। ‘আসতাগফিরুল্লাহাল আজিম’ জিকিরটি নিয়মিত পাঠের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। এটি বিশ্বাসীদের মনে এই বোধ জাগায় যে, বিপদ হয়তো আমাদের কৃতকর্মেরই ফল, তাই ক্ষমা চেয়ে আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়াই আমাদের আত্মিক পরিশুদ্ধির পথ। এভাবে দোয়া, ইস্তিগফার ও তওবাই মুমিনের মানসিক ও আত্মিক ঢাল হিসেবে কাজ করে।
