রাজধানীর উপকণ্ঠে নরসিংদীর মাধবদীতে ৫.৭ মাত্রার আকস্মিক ভূমিকম্প আঘাত হানার পর দেশের ভূতাত্ত্বিক পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে গভীর বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে। দেশি ও আন্তর্জাতিক ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা, যেমন ইউএসজিএস, নিশ্চিত করেছে যে ঢাকা থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরে মাটির গভীরে এই কম্পনের উৎপত্তি। প্রায় সাত কোটি মানুষ এই ঝাঁকুনি অনুভব করেছেন, যাকে আবহাওয়া বিভাগ সাম্প্রতিক ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ কম্পন হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
তবে আলোচনার কেন্দ্রে এখন মাধবদী কেন? শনিবার আরও দুটি ছোট কম্পন—৩.৩ ও ৪.৩ মাত্রার—একই এলাকার পলাশ উপজেলা থেকে অনুভূত হওয়ার পর বিশেষজ্ঞমহল নিশ্চিত করছে যে, এটি একটি বৃহত্তর ভূতাত্ত্বিক প্রক্রিয়ার সূচনা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতারের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, এই কম্পনের মূল কারণ হলো ইন্ডিয়ান প্লেট এবং বার্মিজ প্লেটের সংযোগস্থলে শক্তির দীর্ঘদিনের সঞ্চয়।
অধ্যাপক আখতার ব্যাখ্যা করেন, আমাদের ভূ-পৃষ্ঠ টেকটোনিক প্লেটে বিভক্ত। এই প্লেটগুলি একে অপরের সঙ্গে ধাক্কা, ফাটল বা সরে যাওয়ার মাধ্যমে শক্তি সঞ্চয় করে। তাঁর মতে, নরসিংদীর মাধবদীতে দুই প্লেটের সংযোগস্থলটি 'লকড' অবস্থায় ছিল এবং শুক্রবারের কম্পনটি সেই লকড অংশের একটি অতি ক্ষুদ্রাংশ খুলে যাওয়ার ফল। এটি একটি উদ্বেগজনক ইঙ্গিত যে, সঞ্চিত শক্তি এখন বের হওয়ার পথ খুঁজে পেয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সংযোগস্থলে ৮০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে শক্তি জমা হচ্ছে, যা ৮.২ থেকে ৯ মাত্রার একটি বিধ্বংসী ভূমিকম্প তৈরি করার সক্ষমতা রাখে। অধ্যাপক আখতারের মতে, মাধবদীর ভূমিকম্পের কারণে শক্তি বের হওয়ার পথ সহজ হয়ে যাওয়ায় এখন সেই ভয়াবহ শক্তি যেকোনো সময় নির্গত হতে পারে। এর ফলে ঢাকা শহরের মতো অপরিকল্পিত মহানগরীতে বড় ধরনের মানবিক বিপর্যয় ও বিপুল জানমালের ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
অতীতের ঐতিহাসিক রেকর্ডগুলিও এই অঞ্চলের ভূমিকম্পের ঝুঁকিকে সমর্থন করে। ১৮৯৭ সালে ডাউকি ফল্টে ৮.৭ মাত্রার ভূমিকম্প এবং ১৭৬২ সালে ৮.৫ মাত্রার কম্পন এই অঞ্চলের বিপুল শক্তি ধারণের প্রমাণ দেয়। এসব দৃষ্টান্ত তুলে ধরে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই সময়, ভূমিকম্পের ঝুঁকি মোকাবিলায় নগর পরিকল্পনা, নির্মাণ নীতি ও জরুরি ব্যবস্থাপনা কর্মসূচিতে দ্রুত এবং কার্যকর পরিবর্তন আনা হোক, অন্যথায় বড় দুর্যোগে ঢাকার পরিণতি হবে ভয়াবহ।
