আইন ও আদালত

২৫ সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা: গুমের মামলায় বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু

২৫ সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা: গুমের মামলায় বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে নজিরবিহীন এক আইনি প্রক্রিয়া শুরু হলো ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘ শাসনামলের গুম ও নির্যাতনের অভিযোগকে কেন্দ্র করে। মানবতাবিরোধী অপরাধের দুটি চাঞ্চল্যকর মামলায় আজ (২৩ নভেম্বর) ১৩ জন সেনা কর্মকর্তাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ হাজির করা হয়েছে। এই ঘটনা দেশের সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনে এক নতুন বার্তা দিয়েছে।

ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা যায়, ২৩ নভেম্বর রোববার সকাল ১০টার দিকে পুলিশি এসকর্টে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের ট্রাইব্যুনাল ভবনে নিয়ে আসা হয় এবং প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে হাজতখানায় প্রবেশ করানো হয়। এই মামলার গুরুত্ব বিবেচনা করে ট্রাইব্যুনালের অভ্যন্তরে ও আশেপাশে অতিরিক্ত সামরিক ও বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে, যা নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও সুদৃঢ় করেছে।

এই মামলাগুলোর সূত্রপাত হয় গত ৮ অক্টোবর। ওই দিন গুম-নির্যাতনের দুটি মামলা এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে মোট ২৫ জন সাবেক ও বর্তমান সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। একই দিনে প্রসিকিউশন পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়।

পরবর্তীতে, সেনাবাহিনীর হেফাজতে থাকা ১৫ জন কর্মকর্তাকে ২২ অক্টোবর সকালে সাদাপোশাকে বিশেষ প্রিজন ভ্যানে করে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে, শুনানির পর বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। তবে উচ্চপদস্থ হওয়ায় তাদের নিয়মিত কারাগারের পরিবর্তে ঢাকা সেনানিবাসের অভ্যন্তরে ঘোষিত বিশেষ সাব-জেলে রাখা হয়।

এদিকে, মামলার পলাতক আসামিদের দ্রুত ট্রাইব্যুনালে আত্মসমর্পণের জন্য বাংলা ও ইংরেজি ভাষার দুইটি প্রধান দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সেই নির্দেশনা মেনে ইতোমধ্যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে, যা মামলার পরবর্তী ধাপের কার্যক্রম শুরু করার ইঙ্গিত বহন করে।

উল্লেখ্য, এই মামলায় শুধুমাত্র সামরিক কর্মকর্তারাই নন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার নিরাপত্তা উপদেষ্টা (অবসরপ্রাপ্ত) মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিকী এবং সাবেক পাঁচ ডিজিএফআই প্রধানসহ মোট ৩০ জনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল-১ পূর্বে পৃথক দুটি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল। চলমান এই বিচারিক প্রক্রিয়া দেশের জবাবদিহিতা ও আইনের শাসনের ক্ষেত্রে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে।