রাজনীতি

নীরব কমিশন, বারবার বিধিভঙ্গ: কাঠগড়ায় জকসু নির্বাচনের স্বচ্ছতা

নীরব কমিশন, বারবার বিধিভঙ্গ: কাঠগড়ায় জকসু নির্বাচনের স্বচ্ছতা

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচন ঘিরে বারবার লঙ্ঘিত হচ্ছে নির্বাচনী আচরণবিধি, যার প্রধান অভিযোগের তীর ছাত্রদল সমর্থিত 'ঐক্যবদ্ধ নির্ভিক জবিয়ান' প্যানেলের দিকে। সর্বশেষ, সরাসরি ভোটারদের মধ্যে খাবার বিতরণের ঘটনা ঘটিয়েছেন ভিপি প্রার্থী মো: রাকিব, যা জকসু নির্বাচনী বিধি ১১(ঙ)-এর সরাসরি লঙ্ঘন। বিধি ভঙ্গের এই ধারাবাহিকতা পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতাকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে।

সোমবার (২৪ নভেম্বর) সকালে ক্যাম্পাসের ভেতরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসগুলোতে নিজ নিজ বাড়িতে ফিরতে থাকা শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে এই খাবার বিতরণ করা হয়। প্রার্থীর নিজ হাতে এমন খাদ্য পরিবেশনের দৃশ্যটি তাৎক্ষণিকভাবে আচরণবিধি লঙ্ঘনের উদাহরণ হিসেবে গণ্য হচ্ছে। কারণ, জকসু বিধিতে স্পষ্টত উল্লেখ রয়েছে যে, কোনো প্রার্থীর পক্ষ থেকে ভোটারদের খাদ্য বা পানীয় পরিবেশন করা যাবে না। কেবল সোমবার নয়, এর আগের দিন রাতেও এই বিতরণের বিষয়টি প্যানেলের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজে প্রচার করা হয়েছে, যা প্রমাণ করে এটি একটি সুচিন্তিত নির্বাচনী কৌশল।

ভিপি প্রার্থী মো: রাকিব খাবার বিতরণের বিষয়টি স্বীকার করলেও এটিকে আচরণবিধি লঙ্ঘন মানতে নারাজ। তিনি যুক্তি দিয়েছেন, "এটি একটি উদ্ভুত পরিস্থিতিতে আমরা করেছি, তাই এটি আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়েছে বলে মনে করি না।" প্রার্থীর এই যুক্তি অন্যান্য প্যানেলের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। তাদের মতে, আচরণবিধি ভঙ্গের মতো সুনির্দিষ্ট অভিযোগকে ‘উদ্ভূত পরিস্থিতি’র দোহাই দিয়ে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।

এটিই প্রথম নয়। এর আগে গত রাতে কনসার্টের মঞ্চে ছাত্রদল সমর্থিত জিএস প্রার্থী খাদিজাতুল কোবরা ও সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক তাকরিম আহম্মেদসহ হল সংসদের ভিপি প্রার্থীকেও দেখা যায়। কনসার্টের অনুমতির শর্ত ছিল, কোনো প্রার্থী মঞ্চে উঠতে পারবেন না। বারবার এমন গুরুতর বিধি লঙ্ঘনের পরও নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে কোনো স্বতঃপ্রণোদিত ব্যবস্থা না নেওয়ায় উদ্বেগ বাড়ছে।

এ প্রসঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মোস্তফা হাসান বলেন, "আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়গুলো আমাদের নজরে এসেছে। তবে আমরা এখনো কোনো প্রার্থীর পক্ষ থেকে অভিযোগ পাইনি। যদি লিখিত অভিযোগ আসে, তবে আমরা তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেব।" নির্বাচন কমিশনের এমন 'অপেক্ষার নীতি'তে প্রশ্ন উঠেছে—কমিশন কি শুধু অভিযোগের ভিত্তিতেই কাজ করবে, নাকি নজরে আসার পর স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে নির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠু রাখার দায়িত্ব নেবে?

একের পর এক বিধি ভঙ্গের ঘটনায় জকসু নির্বাচনের সুষ্ঠুতা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। নির্বাচন কমিশন দ্রুত ও কঠোর পদক্ষেপ না নিলে এই প্রক্রিয়া তার বিশ্বাসযোগ্যতা হারাতে পারে।