অন্যান্য

মিরপুরে রাজনৈতিক মদতে নতুন গ্যাং ‘ফোর স্টার’-এর উত্থান

মিরপুরে রাজনৈতিক মদতে নতুন গ্যাং ‘ফোর স্টার’-এর উত্থান

সংসদ নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই রাজধানী ঢাকার মিরপুর অঞ্চলে নতুন ও ভয়ংকর গ্যাং নেটওয়ার্কের উত্থান ঘটছে। সম্প্রতি ‘ফোর স্টার’ নামে একটি নতুন চক্র চাঁদাবাজি, জমি দখল এবং প্রতিদ্বন্দ্বী গ্যাংগুলোর ওপর আক্রমণ চালিয়ে পল্লবী এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। কিন্তু সবচেয়ে গুরুতর বিষয় হলো—এ চক্রের পেছনে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির প্রভাবশালী এক নেতার শক্তিশালী রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা রয়েছে বলে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এই নেতার ছত্রছায়ায় থেকেই গ্রুপটি তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করছে, যা দলটির তৃণমূল স্তরেও তীব্র ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, এই নেতা শুধু চাঁদাবাজি, পদ বাণিজ্য ও আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের ‘শেল্টার’ দিচ্ছেন না, বরং তার প্রভাবে একটি হত্যাকাণ্ডের প্রধান অভিযুক্ত দাগি আসামিকে দ্রুত জামিনে মুক্ত করার ব্যবস্থা করেছেন। এছাড়া মিরপুরের পরিবহন খাতে, বিশেষ করে শিকড় পরিবহনে, ২০ লাখ টাকার বিনিময়ে অবৈধভাবে নিয়ন্ত্রণ তুলে দিয়েছেন শীর্ষ সন্ত্রাসী কচি ও নান্নুর মতো আওয়ামী লীগের দোসরদের হাতে। তার আশীর্বাদে গার্মেন্ট সেক্টর, পরিবহন এবং সিটি করপোরেশনের কাজের কমিশন এখন তার নিয়ন্ত্রণে। ফলে একসময়কার স্বচ্ছ ভাবমূর্তি এখন বিতর্কের মুখে।

অন্যদিকে, দেশের সীমান্ত অঞ্চল দিয়ে অবৈধ অস্ত্রের বেপরোয়া প্রবেশ নতুন করে নিরাপত্তা উদ্বেগ তৈরি করেছে। পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে জানা গেছে, টেকনাফ, বেনাপোল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুষ্টিয়াসহ কমপক্ষে ১৮টি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে নিয়মিত ঢুকছে আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র ও অ্যামুনিশন। এই অবৈধ অস্ত্রের সরবরাহ বাড়ছে বলেই ঢাকার অপরাধীরা নির্ভয়ে আধুনিক অস্ত্র ব্যবহার করছে।

এর চেয়েও ভয়ঙ্কর তথ্য হলো—গত বছরের একটি বিপ্লবের সময় দেশের বিভিন্ন থানা থেকে লুট হওয়া পাঁচ হাজার ৭৬৩টি অস্ত্রের মধ্যে এক হাজার ৩৪০টি এখনো নিখোঁজ। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দাবি, এই নিখোঁজ অস্ত্রগুলোই এখন রাজধানীর ৭৫টিরও বেশি গ্যাংয়ের হাতে রয়েছে, যা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতিকে আরও অনিশ্চিত করে তুলছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের তৎপরতা বৃদ্ধি করলেও, গ্যাং নেটওয়ার্কে রাজনৈতিক সহায়তা গভীর হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে তাদের কাজে সীমাবদ্ধতা আসছে বলে কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু করতে হলে শুধু অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করাই নয়, বরং আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের রাজনৈতিক ‘গ্রিন সিগন্যাল’ দেওয়া বন্ধ করতে হবে এবং তাদের অর্থপ্রবাহের (হুন্ডি নেটওয়ার্ক) ওপর কঠোর নজরদারি বাড়াতে হবে। দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা না গেলে এই চক্রের অপতৎপরতা বন্ধ করা কঠিন হবে।