বাউলশিল্পী আবুল সরকারের গ্রেফতার ও তার সমর্থকদের ওপর নজিরবিহীন হামলার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পাঁচটি সুনির্দিষ্ট দাবি নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে দেশের সুশীল সমাজ। তাদের দেওয়া বিবৃতিতে সরকারের প্রতি স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে যে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা এবং উগ্র গোষ্ঠীর দমন-পীড়নে ব্যর্থতা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না।
নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে জানানো হয়, মানিকগঞ্জে যারা শান্তিপূর্ণভাবে আবুল সরকারের পক্ষে মানববন্ধন করতে গিয়েছিল, তাদের ওপর এক চিহ্নিত গোষ্ঠী নৃশংসভাবে হামলা চালিয়েছে। উদ্বেগের বিষয় হলো, এই সময় স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা ছিল চোখে পড়ার মতো। তারা হামলাকারীদের হাত থেকে আক্রান্তদের রক্ষা করতে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।
বিশিষ্টজনেরা এই ব্যর্থতার জন্য কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়ে বলেছেন, মানিকগঞ্জের হামলার ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত করে দায়ীদের দ্রুত বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। একই সঙ্গে, ঘটনার সময় দায়িত্বে থাকা মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি)-কে অবিলম্বে প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছেন তারা। তাদের মতে, যখন 'তৌহিদি জনতা' নামে একটি গোষ্ঠী আইন হাতে তুলে নিচ্ছে এবং নাগরিকদের রক্তাক্ত করছে, তখন প্রশাসনের এই ধরনের নিষ্ক্রিয়তা সরকারের অঙ্গীকারের পরিপন্থী।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার যখন মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তখন এই ধরনের হামলা এবং বাউলদের প্রকাশ্যে হত্যার উসকানি সরকারের সেই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকেই তুলে ধরে। তাই সরকার যদি চিহ্নিত হামলাকারীদের দায়মুক্তি দেয়, তবে তা দেশের সকল নাগরিকের নিরাপত্তার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
নাগরিক সমাজ তাদের দাবির তালিকায় বাউলশিল্পী ও তাদের আয়োজনের জন্য দেশজুড়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়েছে। পাশাপাশি, ‘ধর্ম অবমাননা’র অভিযোগে আটক আবুল সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ যথাযথভাবে তদন্ত করে দ্রুত মুক্তি দেওয়া এবং এই আইনের অপব্যবহার বন্ধ করার জন্য সরকারের প্রতি জোর আহ্বান জানানো হয়েছে। তারা সরকারের কাছ থেকে সুস্পষ্ট পদক্ষেপের প্রমাণ চেয়েছেন, যা দেশের শিল্পী, লেখক, এবং সব নাগরিকের শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার সুরক্ষিত করবে।
